মানুষের পরিপাকতন্ত্র সম্পর্কে কিছু ছোট প্রশ্ন ও উত্তর

 প্রশ্ন: আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি তাদের অধিকাংশ কেমন ধরনের?

উত্তর: আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি তাদের অধিকাংশই জটিল খাদ্য।

প্রশ্ন: পরিপাক কাকে বলে?

উত্তর: যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় জটিল, অদ্রবণীয় খাদ্যবস্তু নির্দিষ্ট এনজাইমের সহায়তায় দেহের গ্রহণ উপযোগী দ্রবণীয় সরল ও তরল খাদ্য উপাদানে পরিণত হয় তাকে পরিপাক বলে।

প্রশ্ন: পৌষ্টিকতন্ত্র/পরিপাকতন্ত্র কী?

উত্তর: যে তন্ত্র পরিপাকে অংশ নেয় তাকে পৌষ্টিকতন্ত্র বা পরিপাকতন্ত্র বলে।

অথবা 

যে সকল অঙ্গ খাদ্যের পরিবর্তন ঘটাতে অংশ নেয় তাদেরকে একত্রে পৌষ্টিকতন্ত্র বা পরিপাকতন্ত্র বলা হয়।

প্রশ্ন: প্রাণিদেহের যাবহীয় জৈবনিক কাজের ক্ষুদ্রতম একক কি?

উত্তর: প্রাণিদেহের যাবতীয় জৈবনিক কাজের ক্ষুদ্রতম একক হলো কোষ।

প্রশ্ন: বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি কোষের কী প্রয়োজন?

উত্তর: বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি কোষের প্রয়োজন অক্সিজেন ও খাদ্য।

প্রশ্ন: আমরা যে খাবার খাই তার পরিপাক কোথায় আরম্ভ হয়?

উত্তর: আমরা যে খাবার খাই তার পরিপাক আরম্ভ হয় মুখগহ্বরে।

প্রশ্ন: লালা কী?

উত্তর: লালা একপ্রকার বর্ণহীন তরল পদার্থ।

প্রশ্ন: লালা কোথা থেকে নিঃসৃত হয়?

উত্তর: মুখের পেছনে অবস্থিত লালাগ্রন্থি থেকে লালা নিঃসৃত হয়।

প্রশ্ন: খাদ্য পরিপাকে লালার ভূমিকা কী?

উত্তর: খাদ্য পরিপাকে লালার বিশেষ ভূমিকা আছে। লালা খাদ্যবস্তুকে পিচ্ছিল করে ও গিলতে সাহায্য করে। লালায় এক ধরনের অনুঘটক বা এনজাইম থাকে যা খাদ্যবস্তু পরিপাকে সহায়তা করে।

প্রশ্ন: এনজাইম কী?

উত্তর: এনজাইম হলো-

এমন একটি বস্তু, যা খাদ্যবস্তুর সাথে মিশে রাসায়নিক ক্রিয়ায় সাহায্য করে। কিন্তু নিজে অংশ নেয় না ও অপরিবর্তিত থাকে।

নির্দিষ্ট তাপমাত্রা পর্যন্ত এনজাইম ভাল কাজ করে।

নির্দিষ্ট এনজাইম নির্দিষ্ট কাজ করে। যেমন- ট্রিপসিন এনজাইম শুধুমাত্র আমিষের উপর ক্রিয়া করে।

প্রশ্ন: লালার এনজাইম শ্বেতসারকে পরিবর্তন করে কিসে পরিণত করে?

উত্তর: লালার এনজাইম শ্বেতসারকে পরিবর্তন করে শর্করায় (মলটোজ) পরিণত করে। এ কারণে শর্করা জাতীয় খাবার চিবানোর পর কিছুক্ষণ মুখে রাখলে মিষ্টি লাগে।

প্রশ্ন: অন্ননালী কী?

উত্তর: মুখের শেষ প্রান্ত থেকে একটি নল আমাদের দেহের ভিতরের দিকে নেমে গেছে। এই নলের মতো অংশটিকে অন্ননালি বলে। এই নালি দিয়ে খাদ্য ও পানীয় পাকস্থলিতে পৌঁছায়।

প্রশ্ন: পৌষ্টিকনালি কোন্ কোন্ অঙ্গ নিয়ে গঠিত?

উত্তর: মুখছিদ্র, মুখগহ্বর, অন্ননালি, পাকস্থলি, ক্ষুদ্রান্ত্র এবং বৃহদন্ত্র নিয়ে পৌষ্টিকনালি গঠিত

প্রশ্ন: পৌষ্টিকনালির সাথে কোন্ কোন্ গ্রন্থি রয়েছে?

উত্তর: পৌষ্টিকনালির সাথে রয়েছে বিভিন্ন এনজাইম বা জারক রস নিঃসরণকারী তিনটি গ্রন্থি যথা: লালাগ্রন্থি, অগ্ন্যাশয় এবং যকৃৎ।

প্রশ্ন: পাকস্থলি ও ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রাচীরে কী আছে?

উত্তর: পাকস্থলি ও ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রাচীরের আছে এনজাইম ও জারক রস নিঃসরণকারী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রন্থি।

প্রশ্ন: আমাদের পরিপাকনালি কোথা থেকে কোন পর্যন্ত বিস্তৃত?

উত্তর: আমাদের পরিপাকনালি বা পৌষ্টিকনালি মুখগহ্বর থেকে শুরু করে মলদ্বার পর্যন্ত বিস্তৃত।

প্রশ্ন: মুখছিদ্র কী?

উত্তর: মুখছিদ্র থেকেই পরিপাকনালি শুরু। মুখছিদ্রের উপরে রয়েছে উপরের ঠোঁট এবং নিচে রয়েছে নিচের ঠোঁট। ঠোঁটদ্বয় খোলা ও বন্ধ থেকে খাদ্য গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছিদ্র পথেই খাদ্য পরিপাকনালিতে প্রবেশ করে।

প্রশ্ন: মুখগহ্বরের অবস্থান কোথায়?

উত্তর: মুখছিদ্রের পরেই মুখগহ্বরের অবস্থান।

প্রশ্ন: মুখগহ্বর কী দ্বারা বেষ্টিত?

উত্তর: সামনে দাঁতসহ দুটি চোয়াল দ্বারা মুগহ্বর বেষ্টিত। এর উপরে রয়েছে তালু এবং নিচের দিকে রয়েছে মাংসল জিহ্বা।

প্রশ্ন: মুখগহ্বরে কতগুলো লালাগ্রন্থি থাকে?

উত্তর: মুখগহ্বরে দুই পাশে রয়েছে তিন জোড়া লালাগ্রন্থি।

প্রশ্ন: দাঁত কী কাজ করে?

উত্তর: দাঁত খাদ্যবস্তু কেটে ছোট ছোট করে পেষণে সাহায্য করে।

প্রশ্ন: জিহ্বা কী কাজ করে?

উত্তর: জিহ্বা খাদ্যবস্তুর স্বাদ গ্রহণ করে এবং খাদ্যবস্তুকে বারবার দাঁতের নিচে পাঠিয়ে চিবাতে সাহায্য করে। জিহ্বা আমাদের খাদ্যবস্তু গিলতে সাহায্য করে।

প্রশ্ন: লালার কাজ কী?

উত্তর: লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালা খাদ্যকে পিচ্ছিল করে এবং খাদ্যবস্তুকে গিলতে সাহায্য করে।

প্রশ্ন: লালারসের এনজাইম কী কাজ করে?

উত্তর: লালা রসে এক ধরনের উৎসেচক বা এনজাইম আছে, যা শ্বেতসারকে আংশিক ভেঙে শর্করায় পরিণত করে।

প্রশ্ন: মানুষের স্থায়ী দাঁতের সংখ্যা কতটি?

উত্তর: মানুষের স্থায়ী দাঁতের সংখ্যা ৩২ টি।

প্রশ্ন: প্রতিটি চোয়ালে কতটি করে দাঁত থাকে?

উত্তর: প্রতি চোয়ালে ১৬ টি করে দাঁত থাকে।

প্রশ্ন: স্থায়ী দাঁত কত প্রকার ও কী কী?

উত্তর: স্থায়ী দাঁত চার প্রকার। যথা- কর্তন দাঁত, ছেদন দাঁত, অগ্রপেষণ দাঁত এবং পেষণ দাঁত।

প্রশ্ন: কর্তন দাঁতের কাজ কী?

উত্তর: কর্তন দাঁত খাবার ছোট ছোট করে কাটে।

প্রশ্ন: ছেদন দাঁত কী কাজ করে?

উত্তর: ছেদন দাঁত দিয়ে মাংস ও অন্যান্য শক্ত জিনিস ছিঁড়ে ও কাটে।

প্রশ্ন: অগ্রপেষণ দাঁতের কাজ কী?

উত্তর: অগ্রপেষণ দাঁত দিয়ে খাদ্যবস্তু চর্বণ ও পেষণ করা যায়।

প্রশ্ন: পেষণ দাঁত কী কাজ করে?

উত্তর: পেষণ দাঁতগুলো খাদ্যবস্তু চিবাতে ও পিষতে সাহায্য করে।

প্রশ্ন: অন্যান্য দাঁতের অনেক পরে কোন দাঁত গজায়?

উত্তর: অন্যান্য দাঁতের অনেক পরে গজায় আক্কেল দাঁত।

প্রশ্ন: গলবিল কী?

উত্তর: গলবিল মুখগহ্বরের পরে অবস্থান করে। এর মাধ্যমেই খাদ্যবস্তু মুখগহ্বর থেকে অন্ননালি বা গ্রাসনালিতে যায়। গলবিলে কোনো এনজাইম নিঃসৃত হয় না। তাই এখানে কোনো খাদ্যবস্তু পরিপাক হয় না।

প্রশ্ন: অন্ননালি কী?

উত্তর: গলবিল ও পাকস্থলীর মাঝামাঝি জায়গায় নলাকার অন্ননালি অবস্থান করে। খাদ্যবস্তু এর ভিতর দিয়ে গলবিল থেকে পাকস্থলিতে যায়।

প্রশ্ন: পাকস্থলি কী?

উত্তর‌্য: অন্ননালি ও ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যবর্তী স্থানে থলি আকৃতির অঙ্গ হলো পাকস্থলি। গলবিল ও অন্ননালির ক্রমসংকোচনের ফলে পিচ্ছিল খাদ্যবস্তু এখানে এসে জমা হয়।

প্রশ্ন: পাকস্থলির প্রাচীর কেমন?

উত্তর: পাকস্থলির প্রাচীর বেশ পুরু ও পেশিবহুল।

প্রশ্ন: পাকস্থলির কোথায় পেশিবলয় আছে?

উত্তর: পাকস্থলির প্রথম ও শেষ অংশে পেশিবলয় রয়েছে।

প্রশ্ন: পাকস্থলির প্রাচীরে কী থাকে?

উত্তর: পাকস্থলির প্রাচীরে গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি নামে প্রচুর গ্রন্থি থাকে।

প্রশ্ন: পরিপাকে পাকস্থলির ভূমিকা কী?

উত্তর: পাকস্থলিতে খাদ্য সাময়িক জমা থাকে। গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থির পাচক রস পরিপাকে সাহায্য করে।

প্রশ্ন: ক্ষুদ্রান্ত্র কী?

উত্তর: ক্ষুদ্রান্ত্র হলো পাকস্থলির পরবর্তী অংশ, এটা পরিপাকনালির সবচেয়ে দীর্ঘ অংশ।

প্রশ্ন: ক্ষুদ্রান্ত্র কতটি ভাগে বিভক্ত?

উত্তর: ক্ষুদ্রান্ত্র তিনটি ভাগে বিভক্ত। যথা- (ক) ডিওডেনাম (খ) জেজুনাম ও (গ) ইলিয়াম।

প্রশ্ন: ডিওডেনাম কী?

উত্তর: ডিওডেনাম ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশ। এটি পাকস্থলির পরের অংশ, দেখতে ট আকৃতির।

প্রশ্ন: খাদ্য পরিপাকে ডিওডেনামের ভূমিকা কী?

উত্তর: পিত্তথলি থেকে পিত্তরস এবং অগ্ন্যাশয় থেকে অগ্ন্যাশয় রস নালির মাধ্যমে ডিওডেনামে এসে খাদ্যের সাথে মিশে। এ রসগুলো পরিপাকে অংশ নেয়। এখানে আমিষ, শর্করা ও স্নেহ পদার্থের পরিপাক ঘটে।

প্রশ্ন: জেজুনাম কী?

উত্তর: জেজুনাম ডিওডেনাম এবং ইলিয়ামের মাঝের অংশ।

প্রশ্ন: ইলিয়াম কী?

উত্তর: ইলিয়াম ক্ষুদ্রান্ত্রের শেষ অংশ।

প্রশ্ন: খাদ্যের সারাংশ কোথায় শোষিত হয়?

উত্তর: ইলিয়ামের ভিতরের প্রাচীরে শোষণ যন্ত্র থাকে। ব্যাপন পদ্ধতিতে শোষণকার্য সমাধার জন্য প্রাচীরগাত্রে আঙ্গুলের মতো প্রক্ষেপিত অংশ থাকে। এদের ভিলাই (ভিলাস) বলে। হজমের পর খাদ্যের সারাংশ ভিলাসগাত্র দ্বারা শোষিত হয়।

প্রশ্ন: বৃহদন্ত্র কী?

উত্তর: ক্ষুদ্রান্ত্রের পরেই বৃহদন্ত্রের শুরু। এটা ইলিয়ামের পর থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত বিস্তৃত। ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের সংযোগস্থলে একটি ভাল্ব বা কপাটিকা থাকে। লম্বায় এটা ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে ছোট। কিন্তু ভিতরের ব্যাস ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিতরের ব্যাস থেকে বড় থাকে।

প্রশ্ন: বৃহদন্ত্র কতটি অংশে বিভক্ত?

উত্তর: বৃহদন্ত্র তিনটি অংশে বিভক্ত। যথা- (ক) সিকাম (খ) কোলন এবং (গ) মলাশয়।

প্রশ্ন: মলাশয় কী? মল কোথায় জমা থাকে?

উত্তর: মলাশয় বৃহদন্ত্রের শেষ প্রান্ত। দেখতে কতকটা থলির মতো। খাদ্যের অপাচ্য বা অহজমকৃত অংশ এখানে মলরূপে জমা হয়।

প্রশ্ন: পরিপাকগ্রন্থি কী?

উত্তর: পরিপাকনালির যেসব গ্রন্থির নিঃসৃত রস খাদ্য পরিপাকে অংশগ্রহণ করে তাদের পরিপাকগ্রন্থি বলে। লালাগ্রন্থি, যকৃৎ এবং অগ্ন্যাশয় পরিপাক গ্রন্থির অন্তর্ভুক্ত।

প্রশ্ন: লালার এনজাইম হলো                  । উত্তর: টায়ালিন

প্রশ্ন: দেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থির নাম কি?

উত্তর: দেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি হলো যকৃৎ।

প্রশ্ন: যকৃৎ থেকে                       তৈরি হয়। উত্তর: পিত্তরস।

প্রশ্ন: পিত্তরস কোথায় জমা থাকে?

উত্তর: পিত্তরস পিত্তথলিতে জমা থাকে।

প্রশ্ন: পিত্তরস কোথায় খাদ্যের সাথে মিশে?

উত্তর: হজমের সময় পিত্তনালি দিয়ে পিত্তরস ডিওডেনামে এসে খাদ্যের সঙ্গে মিশে। পিত্তরস স্নেহ জাতীয় খাদ্য হজমে সাহায্য করে।

প্রশ্ন: প্রধানত কতটি এনজাইম অগ্ন্যাশয়ে তৈরি হয়?

উত্তর: প্রধানত চারটি এনজাইম অগ্ন্যাশয়ে তৈরি হয়।

প্রশ্ন: অগ্ন্যাশয়ে উৎপাদিত এনজাইম কোথায় খাদ্যের সঙ্গে মেশে?

উত্তর: অগ্ন্যাশয়ে উৎপাদিত এনজাইম অ্যামাইলেজ, ট্রিপসিন, কাইমোট্রিপসিন এবং লাইপেজ ডিওডেনামে এসে খাদ্যের সঙ্গে মেশে।

প্রশ্ন: ট্রিপসিন ও কাইমোট্রিপসিন কোন ধরনের খাদ্য হজমে সাহায্য করে?

উত্তর: ট্রিপসিন ও কাইমোট্রিপসিন আমিষ খাদ্য হজমে সাহায্য করে।

প্রশ্ন: লাইপেজ কি জাতীয় খাদ্য হজমে সহায়তা করে?

উত্তর: লাইপেজ স্নেহ জাতীয় খাদ্য হজমে সহায়তা করে।

প্রশ্ন: অ্যামাইলেজ                     জাতীয় খাদ্য হজমে সাহায্য করে। উত্তর: শর্করা।

প্রশ্ন: গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি কী?

উত্তর: গ্যাস্ট্রিকগ্রন্থি পাকস্থলির ভিতরের প্রাচীরে থাকে। এই গ্রন্থি নিঃসৃত রসের নাম গ্যাস্ট্রিক রস বা পাচক রস।

প্রশ্ন: আন্ত্রিক গ্রন্থি কী? আন্ত্রিক গ্রন্থি নিঃসৃত রসের নাম কী?

উত্তর: ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রাচীরে ভিলাসে প্রচুর আন্ত্রিক গ্রন্থি থাকে। এই গ্রন্থি নিঃসৃত রসের নাম আন্ত্রিক রস।

প্রশ্ন: বৃহদন্ত্রের কাজ কী?

উত্তর: বৃহদন্ত্রে খাদ্য হজম হয় না। এখানে কোনো জারক রস বা এনজাইম তৈরি হয় না। বৃহদন্ত্র মূলত খাদ্যের জলীয় অংশ থেকে পানি শোষণ করে। এ কাজটি অত্যন্ত দরকারি। এতে শরীর থেকে পানি বেশি পরিমাণে বের হওয়া রোধ করে।

বৃহদন্ত্রের সর্বশেষ অংশ অর্থাৎ মলাশয়ে খাদ্যের অপাচ্য অংশ মল হিসেবে সঞ্চিত হয়। প্রয়োজনমতো পরে পায়ু দিয়ে তা শরীরের বাইরে বর্জিত হয়।

প্রশ্ন: গ্যাস্ট্রাইটিস রোগ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তর: সাধারণত বেশি মসলা ও তেলযুক্ত খাবার খেলে, খাওয়ায় অনিয়ম করলে বুক জ্বালা আর অম্বল হয়। এতে পেটে বাড়তি এসিড তৈরি হয় আর তা থেকে পেট বা বুকের মাঝখানে একটা অস্বস্তি বা জ্বালার ভাব হয়। গলা ও পেট জ্বালা করে এবং পেটে ব্যথাসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। সময়মত এ রোগের চিকিৎসা করা না হলে পাকস্থলি ও অন্ত্রে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। তখন একে গ্যাস্ট্রিক আলসার বলে। নিয়মিতভাবে কম মসলা ও কম তেলযুক্ত খাবার খাওয়া এবং সময়মত খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস করলে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

প্রশ্ন: আমাদের দেশে কত ধরনের আমাশয় দেখা যায়?

উত্তর: দুই ধরনের আমাশয় দেখা যায়। যথা- অ্যামিবিক আমাশয় এবং ব্যাসিলারি আমাশয়।

প্রশ্ন: অ্যামিবিক আমাশয় কেন হয়?

উত্তর: প্রধানত এন্টামিবা নামে এক প্রকার এককোষী প্রাণী মানুষের অন্ত্রে প্রবেশ করলে অ্যামিবিক আমাশয় দেখা দেয়।

প্রশ্ন: অ্যামিবিক আমাশয়ের উপসর্গগুলো কী?

উত্তর: এ রোগের উপসর্গগুলো হলো- তলপেটে ব্যথা, মলের সাথে রক্ত বা শ্লেষ্মা বের হওয়া।

প্রশ্ন: অ্যামিবিক আমাশয় কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়?

উত্তর: নলকূপের পানি বা ফুটানো পানি পান, পানি ও শাকসবজি যাতে দূষিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা। মাছি, আরশোলা থেকে খাদ্যবস্তুকে রক্ষার মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করা প্রয়োজন।

প্রশ্ন: ব্যাসিলারি আমাশয় রোগের কারণ কী?

উত্তর: সিগেলা নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রকে আক্রমণ করলে ব্যাসিলারি আমাশয় হয়।

প্রশ্ন: ব্যাসিলারি আমাশয়কে রক্ত আমাশয় বলা হয় কেন?

উত্তর: জীবাণু বৃহদন্ত্রের ঝিল্লিকে আক্রমণ করে। ফলে বারবার পায়খানা হয় এবং পায়খানার সাথে শ্লেষ্মা বের হয়। অনেক সময় এর সাথে রক্তও যায়। এজন্য এ রোগকে রক্ত আমাশয় বলে।

প্রশ্ন: কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়?

উত্তর: কোষ্ঠকাঠিন্য প্রকৃতপক্ষে কোনো রোগ নয়। বিভিন্ন কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। যেমন- পৌষ্টিকনালির মধ্য দিয়ে খাদ্যবস্তুর চলন ধীর হওয়া, কাঁচা ফলমূল ও শাকসবজি না খাওয়া, পায়খানার বেগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে পায়খানায় না বসা ইত্যাদি।

প্রশ্ন: কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কীভাবে দূর করা যায়?

উত্তর: নিয়মিত মল ত্যাগের অভ্যাস গড়ে তোলা, নিয়মিত শাকসবজি খাওয়া, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে এ অসুবিধা দূর করা যায়।

প্রশ্ন: আমরা কীভাবে পরিপাকতন্ত্রের যত্ন নিতে পারি?

উত্তর: আমরা নিম্নলিখিত উপায়ে পরিপাকতন্ত্রের যত্ন নিতে পারি-

১। দাঁত : প্রতিবার খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করা ও পরিষ্কার করা উচিত। দাঁতের ফাঁকে খাবারের কণা আটকে থাকলে তা পঁচে মুখে দুর্গন্ধ হয়। দাঁতের ক্ষয় হয়। খুব বেশি মিষ্টি খেতে নেই। মিষ্টি দাঁত ক্ষয়ের জন্য দায়ী।

২। খাদ্যবস্তু : খাদ্যবস্তু পরিষ্কার ও সুসিদ্ধ হওয়া উচিত। বাসি পঁচা খাবার খাওয়া উচিত নয়। আঙ্গুলের নখ ছোট রাখা এবং খাওয়ার আগে থালাবাটি ও হাত অবশ্যই পরিষ্কার করে নিতে হবে।

৩। খাওয়া : নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া উচিত। একসাথে বেশি খাবার খাবে না। সব সময় সুষম খাবার খাবে। খাওয়ার কিছুক্ষণ পর প্রচুর পানি খাবে। সব সময় পানি ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে খাবে। খাবার ধীরে ধীরে ভালো করে চিবিয়ে খাবে। অধিক মসলা ও তেলযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়।


Comments