প্রশ্ন: জীবদেহ কেমন হতে পারে?
উত্তর: এককোষী অথবা বহুকোষী।
প্রশ্ন: এককোষী জীব কারা?
উত্তর: যেসব জীবের দেহ একটি কোষ দিয়ে গঠিত তারা এককোষী।
প্রশ্ন: এককোষী জীবের যাবতীয় জৈবিক কাজ কোথায় সম্পন্ন হয়/কিভাবে
সম্পন্ন হয়?
উত্তর: এককোষী জীবে একটি মাত্র কোষ দিয়েই এদের যাবতীয় জৈবিক কাজ তথা- পুষ্টি, রেচন, শ্বসন, জনন প্রভৃতি সম্পন্ন হয়।
প্রশ্ন: বহুকোষী জীব কাকে বলে?
উত্তর: বহু কোষ নিয়ে গঠিত জীবদেহকে বহুকোষী জীব বলে।
প্রশ্ন: বহুকোষী জীবদেহ গঠনকারী টিস্যুগুলোর মধ্যে কী ঘটে?
উত্তর: শ্রেণিবিন্যাস এবং শ্রম বিভাজন।
প্রশ্ন: বহুকোষী জীবদেহ গঠনকারী টিস্যুগুলোর মধ্যে শ্রেণিবিন্যাস ও
শ্রমবিভাজন ঘটে কেন?
উত্তর: কারণ যদি সকল কোষ একই সাথে এবং একই রকম ভাবে জৈবিক কার্য সম্পন্ন করত তাহলে জীবদেহের গঠন বৈচিত্র্য এবং শারীরবৃত্তীয় ও জৈবিক কাজগুলোতে নানা রকমের বিশৃঙ্খলা দেখা দিত। এতে সুষ্ঠু জৈবিক ধারা বজায় থাকত না। সুষ্ঠু জৈবিক ক্রিয়া এবং সুষ্ঠু জীবন ধারা রক্ষায় বিভিন্ন প্রকার কোষ সমবেতভাবে বা একত্রে কাজ করার জন্য জীবদেহে গুচ্ছাকারে থাকে।
প্রশ্ন: টিস্যু বা কলা কাকে বলে?
উত্তর: উৎপত্তির দিক থেকে একইরকম কতগুলো কোষ আয়তনে ও আকৃতিতে অভিন্ন
বা ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও যদি দলগত ভাবে অবস্থান করে একই ধরনের কাজ করে তখন সেই
দলবদ্ধ কোষগুলোকে টিস্যু বলে।
প্রশ্ন: বিভাজন ক্ষমতা অনুসারে টিস্যু কত প্রকার?
উত্তর: প্রধানত দুই প্রকার, যথা- ক) ভাজক টিস্যু ও খ) স্থায়ী টিস্যু।
প্রশ্ন: ভাজক টিস্যু কী?
উত্তর: উদ্ভিদের দেহে যেসব টিস্যুর কোষের বিভাজন ক্ষমতা রয়েছে সেগুলোকে ভাজক টিস্যু বলে।
প্রশ্ন: ভাজক টিস্যু উদ্ভিদের কোথায় অবস্থান করে?
উত্তর: ভাজক টিস্যু উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঙ্গে অবস্থান করে। বিশেষত কান্ড ও মূলের অগ্রভাগে অবস্থান করে।
প্রশ্ন: ভাজক টিস্যুর কাজ কী?
উত্তর: ভাজক টিস্যুর কাজগুলো নিম্নরূপ:
(১)
ক্রমাগত বিভাজনের ফলে ভাজক টিস্যু নতুন নতুন কোষ ও টিস্যু সৃষ্টি করে।
(২) এটি
উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের বৃদ্ধি ঘটায়।
(৩) ভাজক টিস্যু টিস্যুর উৎপত্তি ঘটায়।
প্রশ্ন: স্থায়ী টিস্যু কী?
উত্তর: ভাজক টিস্যু থেকে উৎপন্ন বিভাজন ক্ষমতাহীন নির্দিষ্ট আকৃতিযুক্ত পরিণত টিস্যুকে স্থায়ী টিস্যু বলে।
প্রশ্ন: স্থায়ী টিস্যু উদ্ভিদের কোথায় দেখা যায়?
উত্তর: উদ্ভিদের প্রায় সর্বত্র স্থায়ী টিস্যু দেখা যায়।
প্রশ্ন: স্থায়ী টিস্যুর কাজ কী?
উত্তর: স্থায়ী টিস্যুর কাজ হলো-
-
খাদ্য প্রস্তুত ও পরিবহন করা।
- দেহ গঠন ও উদ্ভিদকে দৃঢ়তা প্রদান করা।
প্রশ্ন: প্রাণিদেহে টিস্যু সাধারণত কত ধরনের হয়?
উত্তর: চার ধরনের। যথা- ক. আবরণী টিস্যু, খ. যোজক টিস্যু, গ. পেশি টিস্যু, এবং ঘ. স্নায়ু টিস্যু
প্রশ্ন: আবরণী টিস্যু বা এপিথিলিয়াল টিস্যু কাকে বলে?
উত্তর: যে টিস্যু দেহের খোলা অংশ ঢেকে রাখে এবং দেহের ভিতরের আবরণ তৈরি করে তাকে আবরণী টিস্যু বলে।
প্রশ্ন: মানুষের দেহের কোথায় আবরণী টিস্যু থাকে?
উত্তর: মানুষের ত্বকের বাইরের আবরণ, মুখগহ্বরের ভিতরের আবরণ ইত্যাদি আবরণী টিস্যু দিয়ে গঠিত। দেহের বিভিন্ন গ্রন্থিগুলোও আবরণী টিস্যু দিয়ে তৈরি।
প্রশ্ন: আবরণী টিস্যুর বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: আবরণী টিস্যুর বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:
- আবরণী
টিস্যুগুলো এক বা একাধিক স্তরে সাজানো থাকে।
- কোষগুলো
একটি পাতলা ভিত্তি পর্দার উপর সাজানো থাকে।
- এ ধরনের
কলাতে কোনো আন্তঃকোষীয় ধাত্র থাকে না।
প্রশ্ন: আবরণী কলার কাজ কী?
উত্তর: আবরণী কলার কাজ নিম্নরূপ-
- দেহের
ভিতরের ও বাইরের অঙ্গগুলোকে আঘাত থেকে রক্ষা করে।
- পাকস্থলি ও অন্ত্রের আবরণী কলা পাচক রস ক্ষরণ করে।
প্রশ্ন: পেশি টিস্যু বা মাসকুলার টিস্যু কী?
উত্তর: ভ্রƒণের মেসোডার্ম থেকে তৈরি সংকোচন ও প্রসারণশীল বিশেষ ধরনের টিস্যুকে পেশি টিস্যু বলে। পেশিকোষগুলো সরু, লম্বা ও তন্তুময় হয়।
প্রশ্ন: পেশি কত প্রকার?
উত্তর: দুই প্রকার। যথা-
১। ঐচ্ছিক পেশি এবং
২। অনৈচ্ছিক পেশি।
প্রশ্ন: ঐচ্ছিক পেশি কী?
উত্তর: যে পেশি আমরা ইচ্ছামতো সংকুচিত ও প্রসারিত করে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ সঞ্চালন করতে পারি, তাকে ঐচ্ছিক পেশি বলে।
প্রশ্ন: মানবদেহে কোন ধরনের পেশির সংখ্যা বেশি?
উত্তর: ঐচ্ছিক পেশি।
প্রশ্ন: ঐচ্ছিক পেশির কাজ কী?
উত্তর: ঐচ্ছিক পেশি হাড়ের সাথে লেগে থেকে আমাদের অঙ্গ নড়াচড়া করতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন: অনৈচ্ছিক পেশি কাকে বলে?
উত্তর: যেসব পেশি আমাদের ইচ্ছামতো সংকুচিত হয় না, তাদের অনৈচ্ছিক পেশি বলে। যেমন: অন্ত্রের পেশি।
প্রশ্ন: অন্ত্রের পেশি অনৈচ্ছিক কেন?
উত্তর: অন্ত্রের পেশি আমাদের খাদ্যনালিতে খাদ্য পরিবহণের দায়িত্ব পালন করে। এ ধরনের পেশির উপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই অন্ত্রের পেশি অনৈচ্ছিক পেশি।
প্রশ্ন: হৃৎপেশি কেমন ধরনের পেশি?
উত্তর: বিশেষ ধরনের অনৈচ্ছিক পেশি।
প্রশ্ন: হৃৎপেশি কী কাজ করে?
উত্তর: হৃৎপেশি নিজ ছন্দে পর্যায়ক্রমে সংকুচিত ও স্বাভাবিক হয়ে দেহের রক্ত সঞ্চালন করে।
প্রশ্ন: হৃৎপেশি দ্বারা দেহের কোন কোন অঙ্গ গঠিত?
উত্তর: শুধু হৃৎপিন্ড হৃৎপেশি দ্বারা গঠিত।
প্রশ্ন: পেশির কাজ কী?
উত্তর: পেশি নিম্নলিখিত কাজগুলো করে-
-
দেহের আকৃতি দান করে ও অস্থি সঞ্চালনে সহায়তা করে।
-
নড়াচড়া ও চলাচলে সাহায্য করে।
-
দেহের ভিতরের অঙ্গগুলোকে রক্ষা করে।
- হৃৎপেশি দেহে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে।
প্রশ্ন: যোজক টিস্যু কী?
উত্তর: যে সকল টিস্যু প্রাণিদেহের বিভিন্ন টিস্যু এবং অঙ্গের মধ্যে সংযোগ সাধন করে সে সকল টিস্যুকে যোজক টিস্যু বা কানেকটিভ টিস্যু বলে।
প্রশ্ন: যোজক টিস্যু প্রধানত কেমন হয়?
উত্তর: প্রধানত কঠিন, তরল ও মেদময় হয়।
প্রশ্ন: যোজক টিস্যুর উদাহরণ কী?
উত্তর: রক্ত, হাড়, তরুণাস্থি, মেদময় কলা ইত্যাদি যোজক টিস্যুর উদাহরণ।
প্রশ্ন: হাড় গঠনের প্রধান উপাদান কী?
উত্তর: ক্যালসিয়াম।
প্রশ্ন: হাড় কী কাজ করে?
উত্তর: হাড় দেহের কাঠামো গঠন করে, দেহের ভার বহন করে ও দৃঢ়তা দান করে।
প্রশ্ন: পেশিবন্ধনী কী কাজ করে?
উত্তর: পেশিবন্ধনী বা টেন্ডন পেশিকে হাড়ের সাথে যুক্ত করে।
প্রশ্ন: মেদ কলার কাজ কী?
উত্তর: মেদ কলা স্নেহ পদার্থ সঞ্চিত রাখে।
প্রশ্ন: তন্তুময় যোজক টিস্যু কী কাজ করে?
উত্তর: তন্তুময় যোজক টিস্যু ফুসফুস ও রক্তনালির প্রাচীর সংকোচন ও প্রসারণে সাহায্য করে।
প্রশ্ন: তরুণাস্থির কাজ কী?
উত্তর: তরুণাস্থি হাড়ের চেয়ে নরম ও অন্যান্য টিস্যুর চেয়ে বেশি চাপ ও টান সহ্য করতে পারে। যেমন- নাক ও কানের তরুণাস্থি।
প্রশ্ন: রক্ত কী?
উত্তর: রক্ত এক ধরনের তরল যোজক কলা।
প্রশ্ন: রক্তের কাজ কী?
উত্তর: রক্ত বিভিন্ন দ্রব্যাদি যেমন- অক্সিজেন, খাদ্য, রেচন
পদার্থ দেহের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবহন করে। এছাড়া রক্ত রোগ জীবাণুর
আক্রমণ প্রতিরোধ করে।
প্রশ্ন: স্নায়ুটিস্যু বা নার্ভটিস্যু কাকে বলে?
উত্তর: প্রাণী দেহের যে কলা উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে উপযুক্ত প্রতিবেদন সৃষ্টি করতে পারে তাকে স্নায়ুটিস্যু বা নার্ভটিস্যু বলে।
প্রশ্ন: স্নায়ুটিস্যুর একক কি?
উত্তর: স্নায়ুটিস্যুর একক হচ্ছে স্নায়ুকোষ বা নিউরন।
প্রশ্ন: মস্তিষ্ক কী দ্বারা তৈরি?
উত্তর: অসংখ্য নিউরন বা স্নায়ুকোষ।
প্রশ্ন: প্রতিটি নিউরন কতটি অংশ নিয়ে গঠিত?
উত্তর: তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা-
(ক) কোষদেহ (খ) ডেনড্রন এবং (গ) অ্যাক্সন।
প্রশ্ন: স্নায়ুটিস্যুর কাজ কী?
উত্তর: স্নায়ুটিস্যুর কাজসমূহ নিম্নরূপ:
(১) দেহের
বিভিন্ন ইন্দ্রিয় ও সংবেদন গ্রহণকারী অঙ্গ থেকে গৃহীত উদ্দীপনা মস্তিষ্কে প্রেরণ
করে। দেহের কার্যকর অংশ এ উদ্দীপনায় সাড়া দেয়। যেমন- মশা কামড়ালে এ অনুভূতি
মস্তিষ্কে পাঠায়। মস্তিষ্ক হাতকে এ কথা জানায় তখন হাত মশা মারার চেষ্টা করে।
(২) উদ্দীপনা
বা ঘটনাকে স্মৃতিতে ধারণ করে।
(৩) দেহের
বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
Comments
Post a Comment