জীবের শ্বসন সম্পর্কে কিছু ছোট প্রশ্ন ও উত্তর

 প্রশ্ন: জীবদেহে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের জৈবনিক প্রক্রিয়ার জন্য কী প্রয়োজন?

উত্তর: প্রতিটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবন আছে। জীবদেহে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের জৈবনিক প্রক্রিয়ার জন্য শক্তি প্রয়োজন।

প্রশ্ন: জীবকোষের কোথায় শক্তি সঞ্চিত থাকে?

উত্তর: জীব কোষের সাইটোপ্লাজমে সঞ্চিত র্স্টাচ, শর্করা, প্রোটিন ও ফ্যাটের অণুতে শক্তি সঞ্চিত থাকে।

প্রশ্ন: সকল জীবকোষের জৈব ক্রিয়ার জন্য                      অপরিহার্য।  উত্তর: অক্সিজেন।

প্রশ্ন: শ্বসনের মুখ্য উদ্দেশ্য কী?

উত্তর: অক্সিজেন দ্বারা খাদ্যস্থ স্থৈতিক শক্তি যা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৌরশক্তি থেকে সঞ্চিত হয়, তাকে গতিশক্তি ও তাপশক্তিতে রূপান্তরিত করাই শ্বসনের মুখ্য উদ্দেশ্য।

প্রশ্ন: কোন শক্তি দ্বারা জীব শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পন্ন করে?

উত্তর: খাদ্যস্থ স্থৈতিক শক্তি শ্বসন প্রক্রিয়ায় গতিশক্তি ও তাপশক্তিতে পরিণত হয়। এই গতিশক্তি ও তাপশক্তির দ্বারা জীব খাদ্য গ্রহণ, চলন, রেচন, বৃদ্ধি, জনন প্রভৃতি শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পন্ন করে।

প্রশ্ন: শ্বসন এক প্রকার                       প্রক্রিয়া। উত্তর: দহন।

প্রশ্ন: শ্বসন প্রক্রিয়ায়                          দ্বারা খাদ্য                           হয়ে শক্তি নির্গত হয়।

উত্তর: অক্সিজেন, জারিত।

প্রশ্ন: শ্বসন কী?

উত্তর: যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীবকোষস্থ খাদ্যবস্তু অক্সিজেনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে জারিত হয়ে খাদ্যস্থ রাসায়নিক শক্তিকে গতিশক্তি ও তাপশক্তিতে রূপান্তরিত ও মুক্ত করে এবং ফলশ্রুতিতে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও পানি উৎপন্ন হয় তাকে শ্বসন বলে। 

প্রশ্ন: শ্বসন একটি                    ক্রিয়া।   উত্তর: বিপাকীয়।

প্রশ্ন: শ্বসন প্রক্রিয়া চলাকালে প্রতিটি জীব পরিবেশ থেকে                        গ্রহণ করে এবং                     ত্যাগ করে।

উত্তর: অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড।

প্রশ্ন: কোন ধরনের জীব অক্সিজেন ছাড়া শ্বসনক্রিয়া সম্পন্ন করে?

উত্তর: নিম্নশ্রেণির কিছু উদ্ভিদ ও প্রাণী অক্সিজেন ছাড়া শ্বসনক্রিয়া সম্পন্ন করে।

প্রশ্ন: অক্সিজেনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি উভয় প্রকার শ্বসনের ক্ষেত্রে কোন গ্যাস উৎপন্ন হয়?

উত্তর: কার্বন ডাইঅক্সাইড।

প্রশ্ন: কোষে কখন শ্বসনকার্য ঘটে?

উত্তর: উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রতিটি সজীব কোষে দিন রাত্রি সব সময় শ্বসন কার্য ঘটে।

প্রশ্ন: শ্বসন একটি                              বিপাক প্রক্রিয়া।    উত্তর: অন্তঃকোষীয়।

প্রশ্ন: উদ্ভিদের ক্ষেত্রে অক্সিজেন কীভাবে দেহাভ্যন্তরে প্রবেশ করে।

উত্তর: উদ্ভিদ দেহে শ্বসন কালে অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের বিনিময় অপেক্ষাকৃত সরল। উদ্ভিদের কোনো নির্দিষ্ট শ্বসন অঙ্গ নেই। পাতার পত্ররন্ধ্র, কান্ডের লেন্টিসেল এবং অন্তঃকোষের মাধ্যমে বায়ু দেহঅভ্যন্তরে প্রবেশ করে।

প্রশ্ন: পানিতে নিমজ্জিত উদ্ভিদগুলো কীভাবে অক্সিজেন শোষন করে?

উত্তর: পানিতে নিমজ্জিত উদ্ভিদগুলো সমগ্র দেহতলের সাহায্যে অক্সিজেন শোষণ করে।

প্রশ্ন: নিম্নশ্রেণির প্রাণীতে কিসের মাধ্যমে শ্বসন হয়?

উত্তর: নিম্নশ্রেণির প্রাণীতে প্রধানত ত্বক ও ট্রাকিয়ার মাধ্যমে শ্বসন হয়।

প্রশ্ন: মাছ ও ব্যাঙাচি কিসের সাহায্যে শ্বসন সম্পন্ন করে?

উত্তর: মাছ ও ব্যাঙাচি ফুলকার সাহায্যে শ্বসন সম্পন্ন করে।

প্রশ্ন: স্থলজ মেরুদন্ডীরা কিসের সাহায্যে শ্বসন সম্পন্ন করে?

উত্তর: স্থলজ মেরুদণ্ডী প্রাণীরা ফুসফুসের সাহায্যে শ্বসন সম্পন্ন করে।

প্রশ্ন: আমরা নাক দিয়ে কি করি?

উত্তর: আমরা নাক দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করি।

প্রশ্ন: উদ্ভিদ ও প্রাণীর শ্বসন প্রক্রিয়া কতদিন চলে?

উত্তর: উদ্ভিদ ও প্রাণীর শ্বসন প্রক্রিয়া সারাজীবন চলতে থাকে।

প্রশ্ন: উদ্ভিদ কীভাবে/কিসের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করে?

উত্তর: উদ্ভিদ পাতায় অবস্থিত স্টোমাটা নামক এক প্রকার ছিদ্রের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করে।

 প্রশ্ন: শ্বসনতন্ত্র কাকে বলে?

উত্তর: যে অঙ্গগুলো শ্বসনকার্য চালানোর কাজে অংশ নেয় তাদের একত্রে শ্বসনতন্ত্র বলে।

প্রশ্ন: মানব শ্বসনতন্ত্রের অঙ্গগুলোর নাম কী?

উত্তর: মানব শ্বসনতন্ত্রের অঙ্গগুলো হলো:

১। নাসারন্ধ্র ও নাসাপথ  ২। নাসা গলবিল  ৩। স্বরযন্ত্র  ৪। শ্বাসনালি বা ট্রাকিয়া  ৫। ক্লোম শাখা বা ব্রংকাস 

৬। ফুসফুস ৭। মধ্যচ্ছদা।

প্রশ্ন: নাসিকা কী?

উত্তর: নাসিকা মুখগহ্বরের উপরে অবস্থিত একটি ত্রিকোণাকার গহ্বর। এটি সামনে নাসিকা ছিদ্র হতে পশ্চাতে গলবিল পর্যন্ত বিস্তৃত। একটি পাতলা পর্দা দিয়ে এটি দুইভাগে বিভক্ত হয়েছে। এর সম্মুখভাগ লোম ও পশ্চাৎ দিক ঝিল্লি দ্বারা আবৃত থাকে।

প্রশ্ন: আমরা নাক দিয়ে যে বায়ু গ্রহন করি তাকে কি বলে?

উত্তর: আমরা নাক দিয়ে যে বায়ু গ্রহন করি তাকে প্রশ্বাস বলে।

প্রশ্ন: নাসিকার সম্মুখভাগে অবস্থিত লোম এবং পশ্চাৎ দিকে অবস্থিত ঝিল্লি কী কাজ করে?

উত্তর: প্রশ্বাসে আগত বায়ুতে ধূলিকণা, রোগজীবাণু থাকলে তা এই লোম ও ঝিল্লিতে আটকে যায়।

প্রশ্ন: নাসা গলবিল কী?

উত্তর: নাসা গলবিল হলো নাসাপথের শেষ অংশ যা গলবিলের সাথে মিশেছে। গলবিল পথে শ্বাসনালিতে বাতাস প্রবেশ করে।

প্রশ্ন: গলবিল ও শ্বাসনালির সংযোগস্থলে                        অবস্থিত।    উত্তর: স্বরযন্ত্র।

প্রশ্ন: স্বরযন্ত্রে কী থাকে?

উত্তর: স্বরযন্ত্রে স্বর সৃষ্টিকারী স্বররজ্জু বা ভোকাল কর্ড থাকে। তাই একে স্বরযন্ত্র বলে।

প্রশ্ন: স্বরযন্ত্রের মুখে কি থাকে?

উত্তর: স্বরছিদ্রের মুখে একটা ঢাকনা থাকে।

প্রশ্ন: স্বরযন্ত্রে ঢাকনা কী কাজ করে?

উত্তর: স্বরযন্ত্রের ঢাকনা খাদ্য গ্রহণের সময় স্বরযন্ত্রকে ঢেকে রাখে, ফলে স্বরযন্ত্রে খাদ্য ঢুকতে পারে না। আবার শ্বাস গ্রহণের সময় ঢাকনাটি খুলে  যায়।

প্রশ্ন: শ্বাসনালি বা ট্রাকিয়া কী?

উত্তর: খাদ্যনালির সম্মুখে অবস্থিত স্বরযন্ত্র থেকে শুরু হয়ে ক্লোম শাখা বা ব্রঙ্কাস পর্যন্ত বিস্তৃত নালিকে শ্বাসনালি বলে। শ্বাসনালির মাধ্যমে বায়ু ফুসফুসে প্রবেশ করে।

প্রশ্ন: ক্লোম শাখা বা ব্রঙ্কাস কী?

উত্তর: শ্বাসনালি ফুসফুসের কাছে এসে ডান ও বাম দুইটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যথাক্রমে ডান ও বাম ফুসফুসে প্রবেশ করে। এদেরকে ডান ও বাম ক্লোম শাখা বা ব্রঙ্কাই বলে। একবচনে ব্রঙ্কাইকে ব্রঙ্কাস বলা হয়।

প্রশ্ন: ব্রংকিওল কী?

উত্তর: ফুসফুসে প্রবেশ করার পর ব্রঙ্কাস অসংখ্য শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়। এদেরকে ব্রংকিওল বলে।

প্রশ্ন: মানুষের ফুসফুস কোথায় অবস্থান করে?

উত্তর: বক্ষগহ্বরের ভিতর দুইটি ফুসফুস হৃৎপিন্ডের দুই পাশে অবস্থান করে। ফুসফুস স্পঞ্জের মতো নরম ও কোমল। ডান পাশের ফুসফুসটি বাম পাশের ফুসফুসের চেয়ে সামান্য বড়।

প্রশ্ন: ফুসফুস কী দ্বারা আবৃত?

উত্তর: ফুসফুস দুই ভাজবিশিষ্ট প্লুরা নামক একটি ঝিল্লি বা পর্দা দ্বারা আবৃত।

প্রশ্ন: প্লুরা কী কাজ করে?

উত্তর: প্লুরার দুই ভাঁজের মধ্যে এক প্রকার পিচ্ছিল পদার্থ থাকে। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস কাজে, ফুসফুস ও বক্ষগাত্রের সাথে কোনো ঘর্ষণ লাগে না।

প্রশ্ন: ব্রঙ্কাস প্রতিপাশে ফুসফুসে প্রবেশ করে অসংখ্য শাখা প্রশাখায় বিভক্ত হয়। এই সূক্ষ্ম ব্রংকিওলগুলো কোথায় প্রবেশ করে।

উত্তর: বায়ুথলি বা বায়ুকোষে।

প্রশ্ন: প্রতিটি বায়ুথলি কী দ্বারা গঠিত?

উত্তর: প্রত্যেকটি বায়ুথলি পাতলা এ্যাপিথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত।

প্রশ্ন: বায়ুথলির এ্যাপিথেলিয়াল কোষ কি দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে?

উত্তর: বায়ুথলির এ্যাপিথেলিয়াল কোষগুলো কৈশিক জালিকা দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে।

প্রশ্ন: এ্যাপিথেলিয়াল কোষ ও কৈশিক জালিকা কী কাজ করে?

উত্তর: এ্যাপিথেলিয়াল কোষগুলোতে বায়ু প্রবেশ করলে এগুলো বেলুনের মতো ফুলে উঠে ও পরে আপনা আপনি কুঞ্চিত হয়ে যায়। বায়ুথলি ও কৈশিক নালিকা উভয়ের প্রাচীর এত পাতলা যে, সহজেই এগুলোর মধ্য দিয়ে বায়ু আদান-প্রদান করতে পারে।

প্রশ্ন: মধ্যচ্ছদা বা ডায়াফ্রাম কী?

উত্তর: যে মাংসপেশি বক্ষগহ্বর ও উদরগহ্বরকে পৃথক করে রেখেছে তাকে মধ্যচ্ছদা বলে। এটা দেখতে অনেকটা প্রসারিত ছাতার মতো।

 প্রশ্ন: মধ্যচ্ছদা কীভাবে প্রশ্বাস ও নিঃশ্বাস কাজ নিয়ন্ত্রণ করে?

উত্তর: মধ্যচ্ছদা সংকুচিত হলে নিচের দিকে নামে। তখন বক্ষগহ্বরের আয়তন বাড়ে। আবার এটা যখন প্রসারিত হয় তখন উপরের দিকে উঠে এবং বক্ষগহ্বর সংকুচিত হয়। মধ্যচ্ছদা সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে প্রশ্বাস ও নিঃশ্বাস কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রশ্ন: শ্বসন প্রক্রিয়াকে কত ভাগে ভাগ করা হয়?

উত্তর: শ্বসন প্রক্রিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- ১। বহিঃশ্বসন ও ২। অন্তঃশ্বসন।

প্রশ্ন: বহিঃশ্বসন কী?

উত্তর: যে প্রক্রিয়ায় ফুসফুসের মধ্যে গ্যাসীয় আদান-প্রদান ঘটে তাকে বহিঃশ্বসন বলে। এ পর্যায়ে ফুসফুস ও রক্ত জালিকা বা কৈশিক নালির মধ্যে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে।

প্রশ্ন: বহিঃশ্বসন কতটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়?

উত্তর: বহিঃশ্বসন দুই পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। যথা- প্রশ্বাস এবং নিঃশ্বাস।

প্রশ্ন: প্রশ্বাস বা শ্বাস গ্রহণ কী?

উত্তর: পরিবেশ থেকে আমরা যে অক্সিজেনযুক্ত বায়ু গ্রহণ করি একে শ্বাস গ্রহণ বা প্রশ্বাস বলে।

প্রশ্ন: প্রশ্বাসের সময় মধ্যচ্ছদা ও বক্ষপিঞ্জরাস্থির মাঝের পেশি                    হয়। উত্তর: সংকুচিত।

প্রশ্ন: নিঃশ্বাস কী?

উত্তর: নিঃশ্বাস বহিঃশ্বসনের একটি পর্যায়। প্রশ্বাসের পর পরই নিঃশ্বাস পর্যায় শুরু হয়। এ পর্যায়ে মধ্যচ্ছদা ও পিঞ্জরাস্থির পেশিগুলো শিথিল ও প্রসারিত হয় এবং ফুসফুস আয়তনে ছোট ও সংকুচিত হয়। ফলে বায়ুথলির ভিতরের বায়ু, কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস ফুসফুস থেকে ব্রঙ্কাস ও ট্রাকিয়ার মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে নাসারন্ধ্র দিয়ে বাইরে নির্গত হয়।

প্রশ্ন: অন্তঃশ্বসন কী? অন্তঃশ্বসন প্রক্রিয়াটির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তর: অন্তঃশ্বসন হলো শ্বসনের একটি ধাপ।

অন্তঃশ্বসন প্রক্রিয়ায় দেহকোষস্থ খাদ্য অক্সিজেনের সাহায্যে জারিত হয়ে গতিশক্তি ও তাপশক্তিতে পরিণত হয়। ফুসফুসের রক্তে যে অক্সিজেন প্রবেশ করে তা রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে দেহের দূরবর্তী কৈশিকনালিতে পৌছায়। কৈশিকনালির গাত্র ভেদ করে আন্তঃকোষস্থ রস হয়ে কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। তারপর এটি কোষের ভিতরের খাদ্যের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে শক্তি উৎপন্ন করে। এর ফলে তাপশক্তি ও কার্বন ডাইঅক্সাইড তৈরি হয়। এই কার্বন ডাইঅক্সাইড আবার রক্ত দ্বারা বাহিত হয়ে ফুসফুসে ফেরত আসে।


Comments