গ্যামিটোজেনেসিস বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা

জনন: যে প্রক্রিয়ায় জীব নিজ আকৃতি ও প্রকৃতিবিশিষ্ট অপত্য জীব সৃষ্টি করে, তাকে জনন বলে। জনন জীবের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। প্রাণিজগতে দুধরনের জনন দেখা যায়: অযৌন জনন এবং যৌন জনন। 

অযৌন জনন: যে জনন প্রক্রিয়ায় গ্যামিট উৎপদন ছাড়া দেহকোষ বিভাজন, মুকুলোদগম, পুনরুৎপাদন ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় অপত্য জীব সৃষ্টি হয় তাকে অযৌন জনন বলে। 

যৌন জনন: যে জনন প্রক্রিয়ায় যৌন জনন কোষ অর্থাৎ পুং ও স্ত্রী গ্যামিটের মিলনের ফলে অপত্য জীব সৃষ্টি হয়, তাকে যৌন জনন বলা হয়। যৌন জননের মাধ্যমে সৃষ্ট জাইগোট পরিস্ফুটিত হয়ে অপত্য প্রাণী সৃষ্টি করে।

ব্যক্তিজনিক পরিস্ফুটন: যৌন জননে অংশগ্রহণকারী প্রাণিদের গ্যামিট সৃষ্টি থেকে শুরু করে ভ্রƒণ দশার মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাণীতে পরিণত হওয়ার ঘটনাগুলোকে ব্যক্তিজনিক পরিস্ফুটন বলে। 

নিষেক: যে প্রক্রিয়ায় শুক্রাণু ও ডিন্বাণুর মিলনের ফলে জাইগোট সৃষ্টি হয় তাকে নিষেক বলে।

ক্লিভেজ: জাইগোটের বিভাজনকে ক্লিভেজ বলে। এর ফলে একসারিতে সজ্জিত কোষ সমস্বয়ে গঠিত ফাঁপা বলের মতো ব্লাস্টুলা সৃষ্টি হয়। 

গ্যাস্ট্রুলেশন: ভ্রƒণে আর্কেন্টেরণ (আদিঅন্ত্র) সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে গ্যাস্ট্রুলেশন বলে। এ ধাপে ব্লাস্টুলা-প্রাচীর থেকে দুটি বা তিনটি ভ্রূণীয় স্তর (এক্টোডার্ম, মেসোডার্ম, এন্ডোডার্ম) গঠিত হয়।

গ্যামিটোজেনেসিস: যে প্রক্রিয়ায় প্রাণীদেহে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু উৎপাদিত হয় তাকে গ্যামিটোজেনেসিস বলে। শুক্রাণু উৎপন্নের প্রক্রিয়াকে স্পার্মাটোজেনেসিস এবং ডিম্বাণুু উৎপন্নের প্রক্রিয়াকে উওজেনেসিস বলা হয়।

স্পার্মাটোজেনেসিস: শুক্রাণু উৎপন্নের প্রক্রিয়াকে স্পার্মাটোজেনেসিস বলে। পুরুষ জননাঙ্গে অর্থাৎ শুক্রাশয়ে এ প্রক্রিয়া ঘটে।

সেমিনিফেরাস নালিকা: মেরুদন্ডী প্রাণীদের শুক্রাশয় অসংখ্য সেমিনিফেরাস নালিকায় গঠিত।  এসব নালিকার প্রাচীর জার্মিনাল এপিথেলিয়াম নামক আবরণী কোষে আবৃত থাকে।

জনন মাতৃকোষ: যেসব কোষ শুক্রাণু গঠন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে শুক্রাণু গঠন করে সেগুলোকে প্রিমর্ডিয়াল জনন কোষ বা জনন মাতৃকোষ বলে। 

সারটলি কোষ: স্তন্যপায়ী প্রাণীতে জার্মিনাল কোষগুলোর ফাঁকে ফাঁকে দেহকোষও দেখা যায়। এগুলোকে সারটলি কোষ বলে। এরা বৃদ্ধিশীল শুক্রাণুকে পুষ্টি সরবরাহ করে।

স্পার্মাটোগোনিয়া: অবিভেদিত জনন মাতৃকোষ যে নিউক্লিয়াস বহন করে তা বেশ বড় আকৃতির এবং ক্রোমাটিন-সমৃদ্ধ। উপর্যুপরি মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে এরা সংখ্যায় বৃদ্ধি পায়। সৃষ্ট কোষগুলোকে স্পার্মাটোগোনিয়া বলে। কোষগুলো ডিপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমোসোম বহন করে। 

প্রাইমারি স্পার্মাটোসাইট: স্পার্মাটোগোনিয়া বিপুল পরিমাণ পুষ্টিদ্রব্য ও ক্রোমাটিন পদার্থ সঞ্চয় করে। তখন প্রত্যেক কোষকে প্রাইমারি স্পার্মাটোসাইট বলে।

সেকেন্ডারি স্পার্মাটোসাইট: প্রাইমারী স্পার্মাটোসাইটগুলো প্রথম মায়োটিক বিভাজনের জন্য প্রস্তুত হয়। এ বিভাজনের ফলে এমন দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি হয় যারা হ্যাপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমোসোম বহন করে। তখন এদের সেকেন্ডারী স্পার্মাটোসাইট বলে। 

স্পার্মাটিড: জনন কোষের যে অবস্থাটি স্ফীতকায় ও বিপুল পরিমাণ সাইটোপ্লাজমযুক্ত এবং হ্যাপ্লয়েড, তাকে স্পার্মাটিড বলে। 

স্পার্মিওজেনেসিস: স্পার্মাটিডের জটিল পরিবর্তন প্রক্রিয়া অতিক্রম শেষে শুক্রাণুতে রূপান্তরকে স্পার্মিওজেনেসিস বলে। 

অ্যাক্রোসোম: শুক্রাণুর মাথার সামনের অর্ধেক অংশের উপরে নিউক্লিয়াসকে ঢেকে থাকে অ্যাক্রোসোম। অ্যাক্রোসোম একটি থলি বিশেষ। অ্যাক্রোসোমে উপস্থিত এনজাইমসমূহ ডিম্বাণুর ঝিল্লি ভেদ করে ভেতরে প্রবেশে সাহায্য করে।

উওজেনেসিস: ডিম্বাণু পরিস্ফুটিত হয় ডিম্বাশয়-এ। যে সব জার্মিনাল কোষ থেকে ডিম্বাণু উৎপন্ন হয় সে কোষগুলোকে জনন মাতৃকোষ বা প্রিমর্ডিয়াল জনন কোষ বলে। ডিম্বাণু সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে উওজেনেসিস বলা হয়। 

উওগোনিয়া: উওজেনেসিসের জন্য জার্মিনাল এপিথেলিয়ামের কিছু জনন মাতৃকোষ বড় আকার ধারণ করে মাইটোসিসের মাধ্যমে পুনঃ পুনঃ বিভাজিত হয়। তখন এদের উওগোনিয়া (একবচনে উওগোনিয়াম) বলে। প্রত্যেকটি উওগোনিয়াম ডিপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমোসোম বহন করে।

প্রাইমারি উরসাইট: উওজেনেসিসের বৃদ্ধি পর্যায়-এ পর্যায়ে ডিম্বাশয়ের প্রাচীরে অবস্থিত উওগোনিয়াগুলো পুষ্টিলাভ করে আকারে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এ সময় বিভিন্ন অঙ্গাণুর সংশ্লেষণ ঘটে। আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে নিউক্লিয়াসে মায়োসিস বিভাজনের প্রথম প্রোফেজ দশা শুরু হয়। এ পর্যায়ের ডিম্বকোষকে প্রাইমারি উওসাইট বলে।

সেকেণ্ডারি উরসাইট ও ১ম পোলার বডি: উওজেনেসিসের পূর্ণতা পর্যায়ে প্রাইমারি উওসাইটে প্রথম মায়োসিস বিভাজন সম্পন্ন হয়; ফলে প্রতিটি প্রাইমারি উওসাইট থেকে দুটি অসম আকৃতির হ্যাপ্লয়েড কোষ সৃষ্টি হয়। এদের বড়টিকে সেকেন্ডারি উওসাইট এবং ছোটটিকে ১ম পোলার বডি বলে। 

ওভাম বা ডিম্বাণু: উওজেনেসিসের পূর্ণতা পর্যায়ে দ্বিতীয় মায়োসিস বিভাজনে সেকেন্ডারী উওসাইটটি অসমভাবে বিভাজিত হয়ে দুটিতে পরিণত হয়। অর্থাৎ এ পর্যায়ে একটি প্রাইমারী উওসাইট থেকে একটি বৃহদাকার উওটিড ও ২য় পোলার বডি (ছোট) সৃষ্টি হয়। উওটিড রূপান্তরিত হয়ে ওভাম বা ডিম্বাণুতে পরিণত হয়।

উওপ্লাজম: ডিম্বাণুর সুস্পষ্ট দানাদার সাইটোপ্লাজমকে উওপ্লাজম বলে। 

ডিওটারোপ্লাজম: ডিম্বাণুর ভেতর সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে সষ্ক্রিয় কুসুমের দানা বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো থাকে। একে ডিওটারোপ্লাজম বলা হয় । 

প্রাইমারি ডিম্বঝিল্লি: যে ঝিল্লি উওসাইট থেকে নিঃসৃত হয় তাকে প্রাইমারী ডিম্বঝিল্লি বলে। পতঙ্গ, মলাস্ক, উভচর ও পাখির ডিমে এ ঝিল্লিকে ভিটেলাইন ঝিল্লি বলে কিন্তু ইউরোকর্ডেট ও মাছে এ ঝিল্লি কোরিয়ন নামে পরিচিত। স্তন্যপায়ী প্রাণীর ডিমে ঐ ঝিল্লিকে জোনা পেলুসিডা নামে অভিহিত করা হয়।

করোনা রেডিয়েটা: ভিটেলাইন ঝিল্লি মিউকো-প্রোটিন ও তন্তুময় প্রোটিনে গঠিত এবং তা নিষেকের পূর্ব পর্যন্ত প্লাজমা ঝিল্লির ঘনিষ্ঠ সংলগ্ন থাকে। ডিম্বাশয় থেকে মুক্ত হবার সময় জোনা পেলুসিডার সাথে একস্তর ফলিকল কোষ যুক্ত থাকে। একে করোনা রেডিয়েটা বলে।

ভেজিটাল পোল ও অ্যানিম্যাল পোল: ডিম্বাণু ডিম্বনালীতে প্রবেশের পর করোনা রেডিয়েটা খসে পড়ে। ডিম্বাণুর সাইটোপ্লাজমের যেদিকে বেশি কুসুম থাকে সে অঞ্চলকে ভেজিটাল পোল এবং নিউক্লিয়াস যে দিকে থাকে তাকে অ্যানিম্যাল পোল বলে।

অ্যালেসিথাল ডিম্বাণু: এধরনের ডিম্বাণুতে কুসুম প্রায় থাকে না বললেই চলে। যেমনÑ মানুষ ও অন্যান্য ইউথেরীয় স্তন্যপায়ীর ডিম্বাণু।

মাইক্রোলেসিথাল ডিম্বাণু: এসব ডিম্বাণুতে অতি অল্প পরিমাণ কুসুম ও অন্যান্য সঞ্চিত খাদ্যদ্রব্য থাকে, যেমনÑ একাইনোডার্ম, ইউরোকর্ডেট ও সেফালোকর্ডেট প্রাণীর ডিম্বাণু।

মেসোলেসিথাল ডিম্বাণু: এ ধরনের ডিম্বাণু মাঝারি পরিমাণ কুসুম বহন করে, যেমনÑ উভচরের ডিম্বাণু।

ম্যাক্রোলেসিথাল বা পলিলেসিথাল ডিম্বাণু: এ জাতীয় ডিম্বাণুতে প্রচুর পরিমাণ কুসুম থাকে, যেমনÑ মাছ, সরিসৃপ, পাখি ও মনোট্রিমাটা ভুক্ত স্তন্যপায়ীর ডিম্বাণু।

হোমোলেসিথাল বা আইসোলেসিথাল ডিম্বাণু: এ ধরনের ডিম্বাণুতে সূক্ষ্ম কুসুম দানা সাইটোপ্লাজমে সমানভাবে বিস্তৃত থাকে। যেমন- একাইনোডার্ম, ইউরোকর্ডেট, সেফালোকর্ডেট ও মানুষের ডিম্বাণু।

সেন্ট্রোলেসিথাল ডিম্বাণু: এসব ডিম্বাণুতে কুসুমকে মাঝখানে রেখে সাইটোপ্লাজম একটি পাতলা বহিরাবণের মতো অবস্থান করে। কুসুমের ভেতরে থাকে নিউক্লিয়াসসহ সাইটোপ্লাজমের একটি স্তুপ। পতঙ্গের ডিম্বাণু সেন্ট্রোলেসিথাল ধরনের।

টেলোলেসিথাল ডিম্বাণু: এ ধরনের ডিম্বাণু বিরাট আকারের এবং এর কুসুম দানাও অনেক বড়ো বড়ো। কুসুম ডিমের একপ্রান্ত অর্থাৎ ভেজিটাল পোল দখল করে থাকে, নিউক্লিয়াসসহ বাকি সাইটোপ্লাজম অন্যপ্রান্ত বা অ্যানিমেল পোল এ আশ্রয় নেয়। যেমনÑ মাছ, উভচর, সরিসৃপ ও পাখির ডিম্বাণু।

নিষেক: নির্দিষ্ট প্রজাতির পুরুষ ও স্ত্রী জননকোষের নিউক্লিয়াসের পরস্পর একীভবনকে নিষেক বলে। যৌন প্রজননক্ষ প্রাণীদের জন্য নিষেক অপরিহার্য।

গ্যামোন: শুক্রাণু ও ডিম্বাণু গ্যামোন নামে হরমোন সদৃশ্য কিছু পদার্থ বহন করে। শুক্রাণুর গ্যামোনকে অ্যান্ড্রোগ্যামোন এবং ডিম্বাণুর গ্যামোনকে গাইনোগ্যামোন বলে।

ফার্টিলাইজিন-অ্যান্টিফার্টিলাইজিন পদ্ধতি: ডিম্বাণুর অভ্যন্তরে প্রবেশের আগে শুক্রাণু এক বিশেষ পদ্ধতিতে ডিম্বাণুর গায়ে সংলগ্ন হয়। এ প্রক্রিয়াকে ফার্টিলাইজিন-অ্যান্টিফার্টিলাইজিন পদ্ধতি বলে।

হায়ালুরোনিডেজ: স্তন্যপায়ীর ক্ষেত্রে ডিম্বাণুর জোনা রেডিয়াটা আবরণী ভেদ করার জন্য যে এনজাইম ব্যবহৃত হয় তার নাম হায়ালুরোনিডেজ।

পেরিভিটেলাইন স্পেস: একটি শুক্রাণু ডিম্বাণুকে বিদীর্ণ করার সঙ্গে সঙ্গে ডিম্বাণুর ভিটেলাইন ঝিল্লি প্লাজমা মেমব্রেন থেকে সামান্য উপরে উঠে যায়, ফলে দুই ঝিল্লির মাঝখানে যে ফাঁকা স্থানের সৃষ্টি হয়, তাকে পেরিভিটেলাইন স্পেস বলে।

পুরুষ প্রোনিউক্লিয়াস: শুক্রাণু ডিম্বাণুতে প্রবেশের পর শুক্রাণুর মধ্যমাংশে একটি সেন্ট্রিওল ও সেন্ট্রোসোমের আবির্ভাবের ফলে একটি নতুন বিভাজন কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। তখন নিউক্লিয়াসটিকে পুরুষ প্রোনিউক্লিয়াস বলে।

স্ত্রী প্রোনিউক্লিয়াস: শুক্রাণু ডিম্বাণুতে প্রবেশের পর ডিম্বাণুর দ্বিতীয় মায়োটিক বিভাজন সম্পন্ন হয়ে যায় এবং নিউক্লিয়াসটি প্রান্তদেশ থেকে ডিম্বাণুর প্রায় কেন্দ্রে চলে আসে। দ্বিতীয় মায়োটিক বিভাজনের পর ডিম্বাণুর হ্যাপ্লয়েড নিউক্লিয়াসকে স্ত্রী প্রোনিউক্লিয়াস বলে।

পরিস্ফুটন: নিষেকের পর জাইগোট যে প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ শিশু বা লার্ভায় পরিণত হয় তাকে পরিস্ফুটন বলে। প্রতিটি সদস্যের পরিস্ফুটন প্রক্রিয়াকে ব্যক্তিজনিক পরিস্ফুটন বলে।

ভ্রুণবিদ্যা: জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবের ব্যক্তিজনিক পরিস্ফুটন সম্বন্ধে অধ্যয়ন করা হয়, তাকে ভ্রূণবিদ্যা বলে।

এমব্রায়োজেনেসিস: জাইগোট থেকে ভ্রূণ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে এমব্রায়োজেনেসিস বলা হয়।

ক্লিভেজ: যে প্রক্রিয়ায় জাইগোট মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে অসংখ্য ভ্রূণকোষ সৃষ্টি করে তাকে ক্লিভেজ বা সম্ভেদ বলে। ক্লিভেজে সৃষ্ট ভ্রূণের প্রতিটি কোষকে ব্লাস্টোমিয়ার বলে। 

মরুলা: ক্লিভেজ প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত কোষ বিভাজনের ফলে জাইগোটটি বহুকোষী নিরেট গোলকে পরিণত হয়। এর নাম মরুলা। 

ব্লাস্টুলা: মরুলার কোষগুলো ক্রমশ একস্তরে সজ্জিত হয় এবং এর ভেতরে একটি তরলপূর্ণ গহ্বর সৃষ্টি হয়। ভ্রূণের এ দশাকে ব্লাস্টুলা বলে। ব্লাস্টুলার প্রাচীরকে ব্লাস্টোডার্ম এবং তরলপূর্ণ গহ্বরকে ব্লাস্টোসিল বলে। 

গ্যাস্ট্রুলেশন: ভ্রূণে আর্কেন্টেরণ নামক প্রাথমিক খাদ্যগহ্বর সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে গ্যাস্ট্রুলেশন বলে। পরিস্ফুটনের এ ধাপে ব্লাস্টোডার্ম দুই বা তিনটি কোষস্তর নির্মাণ করে। এদের বলে জার্মিনাল স্তর বা ভ্রূণীয় স্তর। এসব স্তর থেকে প্রাণীদেহের বিভিন্ন অঙ্গ গঠিত হয়। 

গ্যাস্ট্রুলা: ভ্রুণের জার্মিনাল স্তরগুলোতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে, ফলে একটি অংশ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মেসোডার্ম ও এন্ডোডার্ম এ পরিণত হয়। কোষ পরিযানের কারণেই এসব হয়ে থাকে। এ প্রক্রিয়া শেষ হলে ভ্রূণ যে রূপ ধারণ করে তাকে গ্যাস্ট্রুলা বলে। এর ভেতরে যে গহ্বর থাকে তাকে আর্কেন্টেরণ, আর গহ্বরটি যে ছিদ্রপথে বাইরে উন্মুক্ত থাকে, তাকে ব্লাস্টোপোর বলে।

অর্গানোজেনেসিস: গ্যাস্ট্রুলেশনে সৃষ্ট ভ্রƒণীয় স্তরগুলো থেকে ভ্রূণের অঙ্গকুঁড়ি সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে অর্গানোজেনেসিস বলে। তিনটি ভ্রূণীয় স্তরেরই অভিন্ন কোষপিন্ড ছোটো ছোটো কোষগুচ্ছে বিচ্ছিন্ন হয়। প্রত্যেক গুচ্ছ প্রাণীদেহের নির্দিষ্ট অঙ্গ বা অংশ নির্মাণ করে। এসব কোষগুচ্ছকে একেকটি অঙ্গের কুঁড়ি বলে। 

প্রাইমারি অঙ্গকুঁড়ি: যে সব কুঁড়িতে ভ্রুণীয় স্তরগুলোর উপবিভক্তি ঘটে সেগুলোকে প্রাইমারি অঙ্গকুঁড়ি বলে। এদের কয়েকটি বেশ জটিল এবং এমন কতকগুলো কোষ নিয়ে গঠিত যারা একটি সম্পূর্ণ অঙ্গতন্ত্র গঠনেও সক্ষম। যেমন Ñ সমগ্র স্নায়ুতন্ত্র কিংবা পৌষ্টিকতন্ত্র ইত্যাদি।

সেকেহুারি অঙ্গকুঁড়ি: প্রাইমারি অঙ্গকুঁড়ি আরও বিভক্ত হয়ে সেকেন্ডারি অঙ্গকুঁড়িতে পরিণত হয়। এসব কুঁড়ি থেকে উৎপন্ন হয় সেকেন্ডারি অঙ্গের। এ অবস্থায় ভ্রুণ পূর্ণাঙ্গ প্রাণী বা লার্ভার দেহাবয়ব লাভ করে।