প্রাণীর বিভিন্নতা বা প্রাণিবৈচিত্র্য এবং এর প্রকারভেদ

প্রাণিবৈচিত্র্য কী?

বৈচিত্র্য কথাটির অর্থ হলো ভিন্নতা। সে অর্থে প্রাণিবৈচিত্র্য হলো প্রাণীদের মধ্যে ভিন্নতা। এই ভিন্নতা বা বিভিন্নতা হতে পারে পৃথিবীর সমস্ত জলচর, স্থলচর ও খেচর প্রাণীদের মধ্যে। আর এই বৈচিত্র্য বা ভিন্নতা হতে পারে জিনগত, হতে পারে প্রজাতিগত, হতে পারে বাস্তুসংস্থানগত।

আমরা প্রাণীদের দিকে লক্ষ্য করলে বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্য দেখতে পাই। তাদের একেক জনের দেহের গঠন একেক রকম। তারা আলাদা আলাদা পরিবেশে বসবাস করে। তাদের চলনের ধরণ ভিন্ন ভিন্ন। তাদের প্রজননের ধরণ সবার এক রকম নয়। কারও কারও আচরণ আবার অন্য কারও সাথে একদমই মেলে না, যেমন- পরিযায়ী আচরণ।

প্রাণীরা নিজস্ব বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হয়ে থাকে। সহজ কথায় তাদের মধ্যে কোনো না কোনো ভিন্নতা থাকে। পৃথিবীর পরিবেশ বিচিত্র ধরনের। আর এই বিচিত্র পরিবেশে বিচরণ করে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান অগণিত প্রাণী। কেউ অবস্থান করছে সমুদ্রের অতল গভীরতায়, কেউ কেটে চলেছে সাঁতার মাঝ সমুদ্রে বা সমুদ্রপৃষ্ঠে। এদের কেউ কেউ অত্যন্ত দ্রুত। কারও গতি আবার একেবারেই ধীর। কেউ কেউ দোল খায় গাছের ডালে। পরিবেশের বিরূপ অবস্থার হাত থেকে রক্ষা পেতে কেউ কেউ হয় পরিযায়ী। কোনো কোনো প্রাণী এত ক্ষুদ্র যে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখতে হয়। এসকল প্রাণীদের মধ্যে কেউ কেউ ঘাস, লতা-পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে। অর্থাৎ তৃণভোজী। কেউবা আবার মাংসাশী। কেউবা আবার উদ্ভিদ ও প্রাণী খায়। অর্থাৎ সর্বভোজী। কেউ কেউ আবার অন্যের উপর বসবাস করে সেখান থেকে পুষ্টি পেয়ে থাকে। এরা পরভোজী।

প্রাণিবৈচিত্র্য কত প্রকার?

প্রাণিবৈচিত্র্য তিন প্রকার হতে পারে: জিনগত বৈচিত্র্য, প্রজাতিগত বৈচিত্র্য এবং বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য।

জিনগত বৈচিত্র্য: জিন হলো বংশধারা নিয়ন্ত্রণকারী একক। প্রাণীদের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে এই জিনের ভিন্নতাই হলো জিনগত বৈচিত্র্য। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় কবুতরের কথা। জিনগত পার্থক্যের কারণে কবুতরে রয়েছে অসংখ্য ভ্যারইটি।

প্রজাতিগত বৈচিত্র্য: সমগুণ এবং সমবৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জীবকুলকে বলা হয় একেকটি প্রজাতি। ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে যে বৈচিত্র্য তাকে বলা হয় প্রজাতিগত বৈচিত্র্য। দুটি প্রজাতির প্রাণী কখনও একরকম হয় না। দেখা যায় যে, একই গণভুক্ত প্রজাতিগুলোর মধ্যে অনেক পার্থক্য দেখা যায় ক্রোমোজোম সংখ্যায় ও আঙ্গিক গঠনে।

বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য: পৃথিবীতে রয়েছে নানা ধরণের বসতি। এসব বসতি বায়োম নামে পরিচিত। রয়েছে বালুময় মরু বায়োম। রয়েছে বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ বনভূমি বায়োম। আবার রয়েছে ঘাসসমৃদ্ধ তৃণভূমি বায়োম। প্রতিটি বায়োমই ধারণ করে আছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যমন্ডিত বৈচিত্র্যময় প্রাণীদের। আর ভিন্ন ভিন্ন বায়োমে বাসকারী জীবদের মধ্যে যে বৈচিত্র্য তাই হলো বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য।


নোট:

জলচর: জলে চরে যে সকল জীব; স্থলচর: ডাঙায় বিচরণ করে এমন; খেচর : যা আকাশে উড়তে পারে।

পরিযায়ী: বাস্তুসংস্থানের পরিভাষায়, একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির প্রাণীদের এক পরিবেশ থেকে অন্য পরিবেশে বড় পরিসরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া।