তল, ভ্রুণস্তর, খন্ডকায়ন- প্রাণিদের শ্রেণিকরণের ৩টি ভিত্তি

 তল, ভ্রুণস্তর, খন্ডকায়ন- প্রাণিদের শ্রেণিকরণের ৩টি ভিত্তি

প্রথমেই প্রশ্ন আসে শ্রেণিকরণ বা শ্রেণিবিন্যাস কী? শ্রেণিবিন্যাস হলো সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য অনুসারে প্রাণিদেরকে বিভিন্ন দল উপদলে বিন্যস্ত করার পদ্ধতি। প্রত্যেক প্রাণীরই থাকে নিজস্ব অনেক বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণ। আর প্রাণিদেহের এসব বৈশিষ্ট্য শ্রেণিবিন্যাসের সময় প্রাধান্য পায়। 

তল: 

প্রথমেই আসে বিভিন্ন তলের কথা। প্রাণিদেহের তল নির্দেশ করতে ব্যবহার করা হয় বিশেষ বিশেষ কিছু শব্দ। যেমন- মাথার প্রান্তের দিক বা প্রান্ত হলো সম্মুখ বা এন্টেরিয়র। পোস্টেরিয়র বা পশ্চাৎ হলো লেজের প্রান্তের দিক বা প্রান্ত। পৃষ্ঠীয় বা ডর্সাল হলো পৃষ্ঠভাগ বা পিঠ। তলদেশ বা পেট হলো অঙ্কীয় বা ভেন্ট্রাল। শরীরের পাশের দিক বা একপাশ বোঝাতে ব্যবহার করা হয় পার্শ্বীয় বা ল্যাটেরাল। আর দেহের মধ্যরেখা হলো মধ্যভাগ বা সাজিটাল।

ভ্রূণস্তর: 

যে সকল প্রাণীরা যৌন জননে অংশগ্রহণ করে তারে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নিউক্লিয়াসের মিলনে সৃষ্টি হয় জাইগোট। এই জাইগোট ক্রমাগত ভাগ হয়ে পরিস্ফুটিত হতে থাকে। আর এভাবে বিভক্ত হয়ে সৃষ্টি করে ভ্রƒণের। ভ্রƒণের থাকে দুটি বা তিনটি কোষস্তর যেগুলোকে বলা হয় ভ্রƒণস্তর। এ সকল কোষস্তর থেকে ভবিষ্যতে পরিণত প্রাণীদের বিভিন্ন কলা এবং অঙ্গ পরিস্ফুটিত হয়।

কিছু কিছু প্রাণীর ভ্রƒনে কোষস্তরের সংখ্যা থাকে দুইটি। এ সকল প্রাণীদের বলা হয় দ্বিস্তরবিশিষ্ট বা ডিপ্লোব্লাস্টিক। এই দুটি স্তরের বাইরের স্তরটি এক্টোডার্ম এবং ভিতরের স্তরটি এন্ডোডার্ম নামে পরিচিত। এই দুই স্তরের মাঝে থাকে মেসোগ্লিয়া নামক একটি জেলির মতো অকোষীয় স্তর। নিডেরিয়া পর্বের প্রাণীরা দ্বিস্তরবিশিষ্ট হয়।

 অন্যদিকে, ট্রিপ্লোব্লাস্টিক বা ত্রিস্তরবিশিষ্ট প্রাণী হলো তারা যাদের ভ্রƒণের কোষগুলো তিনটি স্তরে সাজানো থাকে। নিডেরিয়া পরবর্তী সকল পর্বের প্রাণীরাই ত্রিস্তরবিশিষ্ট বা ট্রিপ্লোব্লাষ্টিক। এদের ভ্রƒণদেহের কোষগুলো এক্টোডার্ম, মেসোডার্ম ও এন্ডোডার্ম নামক তিনটি স্তরে সজ্জিত থাকে। আর এদের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সৃষ্টি হয় এই তিনটি স্তর থেকেই। এক্টোডার্ম থেকে সৃষ্টি হয় ত্বক বা এপিডার্মিস, স্নায়ুতন্ত্র, সংবেদী অঙ্গ। মেসোডার্ম সৃষ্টি করে পেশিতন্ত্র, কঙ্কালতন্ত্র, সংবহনতন্ত্র। আর এন্ডোডার্ম থেকে পৌষ্টিকতন্ত্র, শ্বসনতন্ত্র ইত্যাদি সৃষ্টি হয়।

খন্ডকায়ন/সেগমেন্টেশন:

যদি কোনো প্রাণীর দেহ তার অনুলম্ব অক্ষ বরাবর একই রকম খন্ডকের ধারাবাহিক পুনরাবৃত্তির ফলে গঠিত হয় তখন তাকে খন্ডকায়ন বা মেটামেরিজম বলে। এক্ষেত্রে দেহ গঠনকারী প্রত্যেকটি অংশ হলো একেকটি খন্ডক বা মেটামেয়ার বা সোমাইট। খন্ডকায়ন হতে পারে বাহ্যিক আবার হতে পারে অভ্যন্তরীণ। যেমন- মানুষের কশেরুকা বা স্নায়ুগ্রন্থির খন্ডকায়ন হলো অভ্যন্তরীণ। অপরদিকে কেঁচোর খন্ডকায়ন বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় ধরনের হতে পারে। প্রথমোক্ত ধরনকে অপ্রকৃত-খন্ডকায়ন বা স্যুডো মেটামেরিজম এবং পরবর্তী ধরণটিকে প্রকৃত বা ট্রু মেটামেরিজম বলা হয়।