@@@ পরিপাকের চূড়ান্ত পর্যায়ের শেষে উৎপন্ন পদার্থ কোথায় শোষিত হয়?
উত্তর: ক্ষুদ্রান্ত্রের ইলিয়াম অংশে। এর অন্তঃপ্রাচীরে অবস্থিত অসংখ্য ক্ষুদ্র অভিক্ষেপ বা ভিলাই - শোষণের জন্য যথাযথভাবে অভিযোজিত।
@@@ ভিলাইগুলোর উপরিভাগের তল কি দিয়ে আবৃত থাকে?
উত্তর: স্তম্ভাকার আবরণী কোষ দিয়ে আবৃত থাকে।
@@@ মানুষের অন্ত্রে কত সংখ্যক ভিলাই থাকে?
উত্তর: প্রায় ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) ভিলাই থাকে।
@@@ সক্রিয় শোষণের মাধ্যমে শোষিত হয় কোন কোন খাদ্যসার?
উত্তর: গ্লুকোজ ও গ্যালাকটোজ ক্ষুদ্রান্ত্রের মিউকাস ঝিল্লির কাইনেজ নামক এনজাইমের সহায়তায় অতি দ্রুত ফসফরাস যুক্ত হয়ে সক্রিয় শোষণের মাধ্যমে শোষিত হয়ে পোর্টাল শিরার রক্তে প্রবেশ করে।
@@@ ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ ও ল্যাকটোজ কোন প্রক্রিয়ায় শোষিত হয়?
উত্তর: ব্যাপন প্রক্রিয়ায়।
@@@ পোর্টাল শিরায় শোষিত খাদ্যসার কোথায় মুক্ত হয়?
উত্তর: যকৃতে।
@@@ আমিষ শোষণ কীভাবে হয়?
উত্তর: আমিষের পরিপাকজাত অ্যামিনো এসিডগুলো শোষিত হয়ে পোর্টাল শিরার রক্তে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে যকৃতে পৌঁছে। সাধারণত এল-অ্যামিনো এসিডগুলো সক্রিয় পদ্ধতিতে এবং ডি-অ্যামিনো এসিডগুলো ব্যাপনের মাধ্যমে শোষিত হয়। অ্যামিনো এসিড ব্যতীত কিছু প্রোটিওজ, পেপটোন ও পলিপেপটাইড অণু অপরিবর্তিত অবস্থায় সামান্য পরিমাণে শোষিত হয়।
@@@ কাইলোমাইক্রন কী?
উত্তর: চর্বির পরিপাকজাত ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারল ব্যাপন প্রক্রিয়ায় ভিলাইয়ের স্তম্ভাকার এপিথেলিয়াম কোষে প্রবেশ করে এবং পুনরায় লিপিডে পরিণত হয়। এপিথেলিয়াল কোষে যে প্রোটিন থাকে তা লিপিড অণুকে আবৃত করে লিপোপ্রোটিন কণা গঠন করে, তার নাম কাইলোমাইক্রন।
@@@ ল্যাকটিয়েল কাকে বলে?
উত্তর: কাইলোমাইক্রন এক্সোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় এপিথেলিয়াল কোষ ত্যাগ করে এবং ভিলাইয়ের লসিকা বাহিকায় প্রবেশ করে। লসিকা তখন সাদা বর্ণ ধারণ করে। এ কারণে তখন লসিকা বাহিকাকে ল্যাকটিয়্যেল বলে।
@@@ ল্যাকটিয়্যেল অর্থ কি?
উত্তর: সাদাটে।
@@@ কাইলোমাইক্রনগুলোর পরিণতি কী?
উত্তর: কাইলোমাইক্রনগুলো লসিকার মাধ্যমে লসিকাতন্ত্রের ভেতর দিয়ে হৃৎপিন্ডের কাছে শিরারক্তের প্লাজমায় প্রবেশ করে। প্লাজমায় একটি এনজাইম লিপিডকে বিশ্লিষ্ট করে আবার কোষের গ্রহণ উপযোগী ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারল সৃষ্টি করে। এগুলো শ্বসনে ব্যবহৃত হয় কিংবা স্নেহ পদার্থ হিসেবে যকৃত, মেসেন্টারি বা চামড়ার নিচে সঞ্চিত থাকে।
@@@ দেহে পানি শোষণ কোথায় হয়, কীভাবে হয়?
উত্তর: ক্ষুদ্রান্ত্রই পানি শোষণের প্রধান স্থান। ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলাইয়ের প্রাচীরের এপিথেলিয়াম কোষ দ্বারা অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় পানি শোষিত হয়। ক্ষুদ্রান্ত্রের শোষণের পর অবশিষ্ট পানি বৃহদান্ত্রে প্রবেশ করে।
@@@ কোথায় কোন পদ্ধতিতে খনিজ লবণ শেষিত হয়?
উত্তর: ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলাইয়ের প্রাচীরের এপিথেলিয়াল কোষ দ্বারা সক্রিয় পদ্ধতিতে খনিজ লবণ শোষিত হয়।
@@@ খাদ্যের ভিটামিন A,D,E,K কোথায় শোষিত হয়?
উত্তর: ক্ষুদ্রান্ত্রে শোষিত হয়। সাধারণত পিত্তলবণ এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।
@@@ ভিটামিন C ও কয়েক প্রকার B ভিটামিন কোন পদ্ধতিতে কোথায় শোষিত হয়?
উত্তর: ব্যাপন ও সক্রিয় শোষণ পদ্ধতিতে ক্ষুদ্রান্ত্রের ইলিয়াম অংশে শোষিত হয়।
@@@ শোষিত অ্যামিনো এসিডের পরিণতি কী হয়?
উত্তর: অ্যামিনো এসিড কোষে গৃহীত হয়ে এনজাইমের সহায়তায় প্রোটিন গঠনে ব্যবহৃত হয়। অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত অ্যামিনো এসিড যকৃতে পরিবর্তিত হয়ে একদিকে ইউরিয়া এবং অন্যদিকে শর্করা বা চর্বিতে রূপান্তরিত হয়। ইউরিয়া বর্জ্য পদার্থ। শর্করা বা চর্বি শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
@@@ গ্লুকোজ গৃহীত হবার পর কী ঘটে?
উত্তর: গ্লুকোজ থেকে কোষে শক্তি উৎপন্ন হয়। কিন্তু গ্লুকোজ অন্যান্য বস্তুর সাথে মিলিত হয়ে প্রোটোপ্লাজমের মেটালিক উপাদান গঠন করে এবং কিছু গ্লুকোজ যকৃত ও পেশিতে গ্লাইকোজেন হিসেবে জমা থাকে।
@@@ শোষিত ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারল দেহের কী কাজে ব্যবহৃত হয়?
উত্তর: ফ্যাটি এসিডের পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে প্রাণী নিজ দেহের উপযোগী চর্বি তৈরি করে। কিন্তু ফ্যাটি এসিড প্লাজমামেমব্রেন ও নিউক্লয়ার মেমব্রেন গঠনে ব্যবহৃত হয়।
@@@ চর্বির শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা কেমন?
উত্তর: গ্লুকোজের তুলনায় দ্বিগুণ।
@@@ বৃহদান্ত্র কী?
উত্তর: মানুষের পৌষ্টিকতন্ত্রের ক্ষুদ্রান্ত্রের ইলিয়ামের পেছন থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত মোটা, নলাকার ও খাঁজযুক্ত অংশকে বৃহদন্ত্র বলে।
@@@ বৃহদন্ত্রে কী প্রবেশ করে?
উত্তর: খাদ্যের পরিপাক এবং পরিপাককৃত খাদ্য দেহে শোষণের পর যে অংশটুকু অপাচ্য থাকে বা শোষিত হয় না, তা বৃহদন্ত্রে প্রবেশ করে।
@@@ বৃহদন্ত্রের দৈর্ঘ্য কত?
উত্তর: প্রায় ১.৫ মিটার।
@@@ বৃহদন্ত্র কতটি অংশে বিভক্ত?
উত্তর: তিন অংশে বিভক্ত। সম্মুখের জেজুনাম সংলগ্ন স্ফীত গোলাকৃতির অংশকে সিকাম , মধ্যবর্তী U আকৃতির বৃহৎ অংশকে কোলন এবং পশ্চাতের পায়ু সংলগ্ন থলি আকৃতির অংশকে মলাশয় বলে।
@@@ অ্যাপেনডিক্স কী?
উত্তর: বৃহদন্ত্রের সিকামের সাথে একটি বদ্ধ ধরনের থলি যুক্ত থাকে। একে অ্যাপেনডিক্স (ধঢ়ঢ়বহফরী) বলে।
@@@ কোলনের কতটি অংশ থাকে?
উত্তর: ৪টি অংশ থাকে। যথা - ক. ঊর্ধ্বগামী কোলন, খ. অনুপ্রস্থ কোলন, গ. নিম্নগামী কোলন এবং ঘ. সিগময়েড কোলন।
@@@ বৃহদন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া কীভাবে ক্রিয়া করে?
উত্তর: মলাশয় ও সিকামে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া (প্রায় ৫০০ প্রজাতির) মিথোজীবী হিসেবে বাস করে। এসব ব্যাকটেরিয়া উদ্ভিদতন্তুর সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ (যেগুলো পরিপাক করার মতো এনজাইম মানুষের পৌষ্টিকনালি থেকে নিঃসৃত হয়না) প্রভৃতির ফারমেন্টেশন ও হাইড্রোলাইসিস ঘটিয়ে ক্ষুদ্র খাদ্যাণুতে পরিণত করে।
@@@ বৃহদন্ত্রে কী শোষিত হয়?
উত্তর: ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে আগত পরিপাক বর্জ্যে বিদ্যমান পানির প্রায় ৭০-৮০% অভিস্রবণের মাধ্যমে বৃহদন্ত্রে শোষিত হয়ে কঠিন মলের আকার ধারণ করে। কিছু পরিমাণ অজৈব লবণ, গ্লুকোজ, অ্যামিনো এসিড, ফোলিক এসিড, ভিটামিন-ই এবং ক বৃহদন্ত্রে শোষিত হয়।
@@@ বৃহদন্ত্রের গবলেট কোষ কী কাজ করে?
উত্তর: বৃহদন্ত্রের মিউকোসা স্তরে অবস্থিত গবলেট কোষ মিউকাস ক্ষরণ করে বৃহদন্ত্রের অভ্যন্তর ভাগকে পিচ্ছিল রাখে।
@@@ খাদ্যের অসার অংশ কোথায় সঞ্চিত থাকে?
উত্তর: ক্ষুদ্রান্ত্রের পরিপাক ও শোষণের পর খাদ্য ও পাচকরসগুলোর অবশিষ্ট উপাদান ইলিওকোলিক পেশিবলয় অতিক্রম করে সিকাম ও কোলনে প্রবেশ করে এবং সেখানে দীর্ঘসময় জমা থাকে।
@@@ দৈনিক কত গ্রাম আর্দ্র মল দেহের বাইরে নিষ্ক্রান্ত হয়?
উত্তর: দৈনিক প্রায় ৩৫০ গ্রাম তরল মন্ড (পযুষব) বৃহদন্ত্রে প্রবেশ করে। মন্ড থেকে শোষণের মাধ্যমে প্রায় ১৩৫ গ্রাম আর্দ্র মল উৎপন্ন হয়ে দেহের বাইরে নিষ্ক্রান্ত হয়।
@@@ ডেফিকেশন কাকে বলে?
উত্তর: যে প্রক্রিয়ায় খাদ্যের অপাচ্য অংশ মলরূপে দেহের বাইরে নির্গত হয় তাকে মল ত্যাগ বা ডেফিকেশন বা ইজেসন বলে।
@@@ রাফেজ কী?
উত্তর: খাদ্যের অপাচ্য, অশোষিত ও দেহে পুষ্টিমূল্যহীন বস্তুকে রাফেজ বলে। এই রাফেজ বিশেষ প্রক্রিয়ায় মলে পরিণত হয়।
@@@ মল নির্গমন সহজ হয় কেন?
উত্তর: বৃহদন্ত্রের প্রাচীর থেকে ক্ষরিত মিউকাস লুব্রিক্যান্ট রূপে কাজ করে ফলে মল নির্গমন সহজ হয়।
@@@ মল বৃহদন্ত্রে কত ঘন্টা অবস্থান করে?
উত্তর: প্রায় ৩৬ ঘন্টা।
@@@ মল দুর্গন্ধযুক্ত হয় কেন?
উত্তর: মল বৃহদন্ত্রে প্রায় ৩৬ ঘন্টা অবস্থান করে। এ সময়ের ভিতর বস্তুগুলো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে বিভিন্ন সালফারঘটিত গ্যাসে (যেমন- হাইড্রোজেন সালফাইড) উৎপন্ন হয় এবং মল দুর্গন্ধযুক্ত হয়।
@@@ মল কীভাবে দেহের বাইরে বের হয়ে আসে?
উত্তর: মল মলাশয়ে প্রবেশ করলে মলাশয়ের প্রাচীরে যে চাপ সৃষ্টি হয় তা থেকে ডেফিকেশন প্রতিবর্তী ঘটে। ফলে কোলনে পেরিস্ট্যালসিস শুরু হয় এবং মলকে নিচের দিকে ঠেলে দেয়। উদর পেশি এবং ডায়াফ্রামের ঐচ্ছিক সংকোচনের ফলে পায়ুনালির ভিতর স্ফিংটার পেশি শিথিল হয় এবং মল পায়ু পথে দেহের বাইরে বের হয়ে আসে। পূর্ণবয়স্ক মানুষ দিনে একবার কিংবা দুবার, আর শিশুরা বেশ কয়েকবার মলত্যাগ করে।