দেহের পর্শুকাসমূহ বুকের সামনের দিকে স্টার্ণাম (বক্ষফলক বা উর:ফলক) এবং পেছনের দিকে থোরাসিক বা বক্ষীয় কশেরুকায় মিলিত হয়ে খাঁচার মতো গঠন তৈরি করে। এই খাঁচাটি হলো বক্ষপিঞ্জর। [মানুষের একাদশ ও দ্বাদশ পর্শুকা জোড়া থোরাসিক অর্থাৎ বক্ষদেশীয় কশেরুকার সাথে যুক্ত থাকে কিন্তু সামনের দিকে স্টার্ণামের সাথে যুক্ত থাকে না। এই পর্শুকাগুলো হলো ভাসমান পর্শুকা।]
বক্ষপিঞ্জরের ভেতরের গহ্বরটি হলো বক্ষগহ্বর যার মধ্যে অবস্থান করে হৃদপিন্ড ও ফুসফুস। বক্ষপিঞ্জর একদিকে বাইরের আঘাত থেকে হৃদপিন্ড ও ফুসফুসকে রক্ষা করে এবং অন্যদিকে সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে বক্ষগহ্বরের আয়তন বাড়িয়ে বা কমিয়ে বহিঃশ্বসন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে
মানুষের বক্ষপিঞ্জরে থাকে-
১। একটি স্টার্ণাম বা উরঃফলক।
২। ১২ জোড়া পর্শুকা।
৩। ১২ টি থোরাসিক বা বক্ষীয় কশেরুকা।
স্টার্ণাম বা উরঃফলক:
এটি একটি চাপা অস্থি। অস্থিটি বুকের সামনের দিকের কেন্দ্রে অবস্থিত। স্টার্ণামের তিনটি অংশ আছে-
ম্যানুব্রিয়াম: স্টার্ণমের উপরের অংশটি দেহের সাথে সূক্ষ্মকোণ সৃষ্টি করে সামনের দিকে প্রসারিত থাকে। ত্রিকোণাকার এই অংশটি হলো ম্যানুব্রিয়াম।
দেহ: মাঝের লম্বা অংশ হলো দেহ।
জিফয়েড প্রসেস: নিচের ক্ষুদ্র অংশ।
স্টার্ণামে অনেকগুলো খাঁজ থাকে। তথাকথিত একটি জুগুলার নচ বা খাঁজ থাকে স্টার্ণামের উপরের কিনারায়। সাত জোড়া পর্শুকা এবং ক্ল্যাভিকলের খাঁজ থাকে স্টার্ণামের কিনারায়।
পর্শুকা:
মানুষে পর্শুকার সংখ্যা হলো ১২ জোড়া। প্রতিটি পর্শুকা লম্বা। এগুলো বাঁকানো এবং চাপা অস্থি। একটি পর্শুকার দুটি অংশ থাকে। যে অংশটি সামনের দিকে স্টার্ণামের সাথে লাগানো থাকে তা তরুণাস্থিময়। আর যে অংশটি পেছনে মেরুদন্ডের সাথে লাগানো থাকে তা অস্থিময়।
প্রতিটি পর্শুকা বক্ষদেদেশীয় কশেরুকার সেন্ট্রামের সাথে মাথা ও ক্যাপিচুলাম দিয়ে লাগানো থাকে। আর একটি অংশ একই কশেরুকার ট্রান্সভার্স প্রসেসের সাথে টিউবারকুলাম নামক ছোট একটি উদগত পৃষ্ঠীয় অংশ দ্বারা যুক্ত থাকে।
পর্শুকাগুলোকে উপর থেকে নিচের দিকে নাম্বারিং করা হয়। প্রথম ৭ জোড়া পর্শুকাকে বলা হয় আসল বা প্রকৃত পর্শুকা। এই পর্শুকাসমূহের বৈশিষ্ট্য হলো, এদের সম্মুখ অংশ তরুণাস্থি দ্বারা গঠিত এবং এরা সামনের দিকে স্টার্ণামের সাথে যুক্ত থাকে।
নিচের ৫ জোড়া হলো নকল পর্শুকা। এগুলোকে নকল পর্শুকা বলার কারণ হলো, এগুলো স্টার্ণামের সাথে যুক্ত থাকে না। এদের মধ্যে আবার ৮ম, ৯ম ও ১০ম পর্শুকাসমূহ উপরের ৭ম পর্শুকার তরুণাস্থির সাথে একীভূত হয়ে নির্মাণ করে কোস্টাল আর্চ।
একাদশ ও দ্বাদশ পর্শুকা সামনের দিকে মাংসপেশীতে মুক্ত থাকে। সরল ও ক্ষুদ্র এই পর্শুকাগুলোই ভাসমান পর্শুকা নামে পরিচিত। প্রকৃত বা আসল পর্শুকার দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকে ক্রমশ উপর থেকে নিচের দিকে। অপরদিকে, নকল পর্শুকার দৈর্ঘ্য বাড়ে নিচ থেকে উপরের দিকে।
পর্শুকার অন্তর্তলের নিম্ন কনারায় যে কোস্টাল খাদ থাকে তাতে স্নায়ু ও রক্তবাহিকা অবস্থান করে। প্রথম পর্শুকাজোড়ার উপরের তলে শিরা ও সাবক্ল্যাভিয়ান ধমনি ধারণ করার জন্য দুটি এবং পেশি সংযোজনের জন্য দুটি খাদ থাকে। দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী অঞ্চলে বহিঃ ও অন্তঃ ইন্টারকোস্টাল পেশি তির্যকভাবে বিন্যস্ত থাকে। উপরের ও নিচের দুটি কোস্টাল তরুণাস্থির মাঝখানে যে ফাঁকা স্থান থাকে তাকে বলে ‘ইন্টারকোস্টাল স্পেস’।
বক্ষপিঞ্জরের গুরুত্ব: মানুষের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি অঙ্গ, হৃদপিন্ড ও ফুসফুস বক্ষপিঞ্জরের মধ্যেই সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে।
Comments
Post a Comment