খনিজ লবণ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন: খনিজ লবণ কী? খনিজ লবণের কাজ কী?

উত্তর: খনিজ লবণ:

= খনিজ লবণ, আমিষ, শর্করা, স্নেহ পদার্থের মতো দেহে তাপ উৎপন্ন করেনা কিন্তু দেহকোষ ও দেহে তরলের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।

= ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরিন, আয়োডিন, লৌহ, সালফার ইত্যাদি লবণ জাতীয় দ্রব্য খাদ্যের সাথে দেহে প্রবেশ করে ও দেহ গঠনে সাহায্য করে।

= এসব উপাদান দেহে মৌলিক উপাদান হিসেবে থাকে না, অন্য পদার্থের সঙ্গে জৈব ও অজৈব যৌগরূপে থাকে।

= মাংস, ডিম, দুধ, সবুজ শাকসবজি এবং ফল খনিজ লবণের প্রধান উৎস।

কাজ:

= প্রধানত দুই ভাবে খনিজ লবণ দেহে কাজ করে: দেহ গঠন উপাদানরূপে এবং দেহ অভ্যন্তরীণ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।

= খনিজ লবণ দেহ গঠন ও দেহের অভ্যন্তরীণ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।

= অস্থি, দাঁত, এনজাইম ও হরমোন গঠনের জন্য খনিজ লবণ অপরিহার্য উপাদান।

= স্নায়ু উদ্দীপনা ও পেশি সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে।

= দেহের জলীয় অংশে সমতা রক্ষা করে এবং বিভিন্ন এনজাইম সক্রিয় করে।


প্রশ্ন: মানবদেহে খনিজ লবণের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর।

উত্তর: মানবদেহে খনিজ লবণের প্রয়োজনীয়তা:

= ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড় গঠনে, রক্ত জমাট বাঁধতে, স্নায়ু ব্যবস্থায় সুষ্ঠু কাজ সম্পাদনে সহায়তা করে।

= ফসফরাস দাঁত ও হাড় গঠন, ফসফোলিপিড তৈরি করে।

= লৌহ রক্তের লোহিত রক্তকণিকা গঠন, উৎসেচক বা এনজাইমের কার্যকারিতায় সহায়তা করে।

= আয়োডিন থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ ও বিপাকের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে সহায়তা করে।

= দেহের অধিকাংশ কোষ ও দেহরসের জন্য সোডিয়াম প্রয়োজন।

= পেশি সংকোচনে পটাশিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রশ্ন: গলগণ্ড বা ঘ্যাক কী? গলগণ্ড রোগের লক্ষণগুলো কী কী? গলগণ্ডের প্রতিকার কী?

উত্তর: গলগণ্ড: 

= যখন আমাদের রক্তে কোনো কারণে আয়োডিনের অভাব ঘটে তখন গলায় অবস্থিত থাইরয়েডগ্রন্থি ক্রমশ আকারে বড় হতে থাকে। গলা ফুলে যায়। একে গলগণ্ড বা ঘ্যাগ বলে।

= আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে রংপুর, দিনাজপুর, জামালপুর ও ময়মনসিংহে এ রোগের প্রকোপ বেশি।

এ রোগের লক্ষণগুলো নিম্নরূপ:

= থাইরয়েডগ্রন্থি ফুলে যায়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

= শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় শব্দ হয়।

= গলার আওয়াজ ফ্যাঁসফেসে হয়ে যায়।

= গলায় অস্বস্তিবোধ হয়, খাবার গিলতে কষ্ট হয়।

= আক্রান্ত ব্যক্তি অবসাদ ও দুর্বলতাবোধ করে।

প্রতিকার:

রোগের প্রাথমিক অবস্থায় আয়োডিনযুক্ত লবণ, সামুদ্রিক মাছ, মাছের তেল ও সামুদ্রিক শৈবাল ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।


প্রশ্ন: ক্রোটিনিজম কেন হয়? ক্রোটিনিজম রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে লিখ।

উত্তর: ক্রোটিনিজম:

সাধারণত আয়োডিনের অভাবে শিশুদের এ রোগ হয়।

এই রোগে আক্রান্ত শিশুর দেহে যে লক্ষণগুলো দেখা দেয় তা হলো-

= দেহের বর্ধন মন্থর হয়।

= পুরু ত্বক, মুখমণ্ডলের পরিবর্তন দেখা দেয়।

= পুরু ঠোঁট, বড় জিহ্বা, মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

প্রতিকার:

যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা করা হলে শিশুদের দৈহিক অসুবিধাগুলো দূর হয় ও স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঠিক রাখা যায়।

প্রতিরোধ:

খাবারে আয়োডিনযুক্ত লবণ দিয়ে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।


প্রশ্ন: রক্তাল্পতা বা এ্যানিমিয়া কেন হয়? এ্যানিমিয়ার লক্ষণ ও প্রতিকার লিখ।

উত্তর: রক্তাল্পতা বা এ্যানিমিয়া:

লোহা, লোহিত রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিনের গঠন উপাদান। শিশু ও সন্তান সম্ভবা মায়ের খাদ্যে লোহার ঘাটতির জন্য রক্তাল্পতা দেখা যায়। সাধারণত শিশুদের পেটে কৃমি হলে রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে। এর লক্ষণগুলো হলো-

= দুর্বলতাবোধ, মাথা, গা ঝিমঝিম করা।

= বুক ধড়ফড় করা।

= মাথা ঘোরানো, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে উঠা।

= ওজন হ্রাস ও খাওয়ায় অরুচি দেখা দেয়া।

= রোগ কঠিন আকার ধারণ করলে হৃৎপিণ্ডের দ্রুত রক্ত সঞ্চালন ও হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

প্রতিকার:

= লৌহ সমৃদ্ধ শাকসবজি, ফল, মাংস, ডিমের কুসুম, যকৃৎ ও বৃক্ক ইত্যাদি বেশি করে খাওয়া।

= প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা।