ভেজাল খাদ্য। বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য। বিষাক্ত দ্রব্যের উৎস। আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি । প্রতিরোধ ও প্রতিকার
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
এন্টিবায়োটিকস, হেভি মেটালস, বাণিজ্যিক রং, ফরমালিন, কীটনাশক, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, প্রভৃতি ভেজাল ও বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য আমাদের খাবারে ব্যবহার করা হয়। এসব খাবার খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। আমরা অসুস্থ হই আর আমাদের জীবন হয়ে ওঠে সংকটাপূর্ণ।
আসুন জেনে নিই উল্লিখিত ক্ষতিকর পদার্থগুলো কোন কোন উৎস থেকে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে আর এর প্রতিকারই বা কী।
প্রথমেই আসা যাক এন্টিবায়োটিকের কথায়। পশুখাদ্য, মাছ প্রভৃতিতে এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে তা ঐ সকল প্রাণীদের শরীরে জমা হয়। ঐ সকল প্রাণী বা প্রাণী থেকে প্রাপ্ত খাদ্য দুধ, ডিম প্রভৃতি গ্রহণ করার ফলে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। সুতরাং এন্টিবায়োটিকের এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে মাছ ও পশুখাদ্যে এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে। শুধুমাত্র অনুমোদিত ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। আর ঔষধ ব্যবহারের পূর্বে নিতে হবে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ।
এবার আসা হেভি মেটালের কথায়। মাটি, কয়লা, ট্যানারির বর্জ্য, প্রাণীর মল প্রভৃতি অখাদ্য উপাদান বিভিন্নভাবে প্রাণীর শরীরে জমা হয়। এসব অখাদ্য উপাদান খাওয়া মাছ ও পশু থেকে আমাদের শরীরে হেভি মেটালগুলো জমা হয়। আর তাই এসব উপাদান মাছ ও পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার না করাই উত্তম।
ফরমালিনের ব্যবহার আমাদের দেশে অত্যন্ত উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। ফরমালিন হলো মর্গে লাশ সংরক্ষনের প্রধান উপাদান। এছাড়া ল্যাবরেটরিতে প্রাণী এবং প্রাণীদেহের অংশবিশেষ সংরক্ষণ করতে ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। এই ফরমালিন বর্তমানে মাছ-মাংস, দুধ, ফলমূল, শাকসবজি প্রভৃতি সংরক্ষণে অনুমোদন ছাড়াই ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে মানুষের শরীরে সহজেই ফরমালিন প্রবেশ করে বিভিন্ন জটিল রোগ এমনকি ক্যান্সারও সৃষ্টি করছে। ফরমালিনের ব্যবহার সম্পূর্ণ পরিহার করা ছাড়া এ সমস্যার কোন প্রতিকার নেই।
আমরা বর্তমানে নানা ধরনের মুখরোচক খাবার খাই। এই খাবারগুলো দেখতেও আকর্ষণীয়। এই আকর্ষণের পেছনে রয়েছে বাণিজ্যিক রং এর ব্যবহার। কারখানায় ব্যবহৃত অনুমোদনবিহীন এসব রং ব্যবহার করে আইসক্রিম ও গোলা আইসক্রিম, জুস, কোমল পানীয়, ভাজা বড়া, মিষ্টি প্রভৃতিকে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়। এসব রং করা খাবার আমাদের শরীরে তৈরি করে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতার। সৃষ্টি করে নানা রোগ। তাই এসব রং করা খাবার পরিহার করতে হবে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র অনুমোদিত খাদ্যরং ব্যবহার করতে হবে।
বালাইনাশকের ব্যবহার আমাদের খাদ্য উৎপাদন অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু কীটনাশক ব্যবহার করে যে শাক-সবজি উৎপাদন করা হয় তাতে কীটনাশক থেকেই যায়। আর এই শাক-সবজি খাওয়ার মাধ্যমে কীটনাশক আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। এমনকি শুঁটকি মাছে ব্যবহার করা হয় ক্ষতিকর ডিডিটি। এসব খাবার সহজেই আমরা গ্রহণ করি আর নিজেদের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করি। সুতরাং শাক-সবজি বাজারজাত করার পূর্বে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে যে তা কীটনাশকের বিষাক্ততা মুক্ত। আর শুঁটকি মাছে কীটনাশক ব্যবহার পরিহার করতে হবে।
বর্তমানে কাঁচা ফলমূল পাকাতে ব্যবহার করা হয় মাত্রাতিরিক্ত কার্বাইড। কর্বাইড ছাড়াও ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যেমন- কোমল পানীয়তে মাত্রাতিরিক্ত সরবেট অননুমোদিত ব্যবহার করা হয়। ফলে এসব পদার্থ সহজেই আমাদের শরীরে প্রবেশের সুযোগ পায়। এ থেকে রক্ষা পেতে ফল পাকতে সময় দিতে হবে। মানুষকে কার্বাইড ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে হবে। আর সরবেট ব্যবহার করতে হবে পরিমিতভাবে।
উপরের আলোচনা একটি বিষয়ে আমাদের নিশ্চিত করে যে, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ক্ষতিকর দ্রব্য খাদ্যের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। শুধুমাত্র জনসচেতনতাই পারে এসব ক্ষতিকর পদার্থের অনিষ্ট থেকে আমাদের রক্ষা করতে। আসুন আমরা সচেতন হই আমাদের নিজেদের জন্যই, আর আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ